ইউক্রেনে আক্রমণের আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চীন সফরে গিয়ে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন (ফাইল ছবি)

টানা সাড়ে পাঁচ মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই মস্কোর সমালোচনায় সরব অনেক দেশ। এমনকি অস্ত্র ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে সৃষ্ট সংকটের জন্য বিশ্বের বহু দেশ রাশিয়াকেই দায়ী করে যাচ্ছে।

তবে এবার স্রোতের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে কার্যত রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে চীন। একইসঙ্গে ইউক্রেনে চলমান সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ‘প্রধান উসকানিদাতা’ হিসেবেও অভিহিত করেছে দেশটি। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা তাস-এর সাথে একটি সাক্ষাৎকারে মস্কোতে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং হানহুই ইউক্রেন সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ‘প্রধান উসকানিদাতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বুধবার প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে তিনি সামরিক জোট ন্যাটোর বার বার সম্প্রসারণ এবং ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অর্ন্তভুক্ত করতে চাওয়াসহ রাশিয়াকে কোণাঠাসা করার চেষ্টার জন্য ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করেছেন।

সাক্ষাৎকারে চীনা রাষ্ট্রদূত ঝাং বলেছেন, ‘ইউক্রেনীয় সংকটের সূচনাকারী এবং প্রধান উসকানিদাতা হিসাবে ওয়াশিংটন রাশিয়ার ওপর অভূতপূর্বভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার মধ্যেই কিয়েভকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ বজায় রাখা এবং নিষেধাজ্ঞার কবলে ফেলে রাশিয়াকে নিঃশেষ ও চূর্ণ করা।’

রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনে আক্রমণের বিষয়ে রাশিয়া যেসব কারণ দেখিয়েছে, চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য মূলত সেসব যুক্তিই অনুসরণ করেছে। রুশ এই আগ্রাসনে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এবং বহু শহর পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। একইসঙ্গে ইউক্রেনীয় জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য বেইজিং সফর করেছিলেন। তবে ঠিক সেই সময়ই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো হচ্ছিল। উভয় নেতা সেসময় তাদের অংশীদারিত্বে ‘কোনো সীমা’ না রাখার ব্যাপারে সম্মত হন।

বুধবার প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে ঝাং বলেন, চীন-রাশিয়া সম্পর্ক ‘ইতিহাসের সেরা সময়ে প্রবেশ করেছে। উভয় দেশের এই সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থার সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে।’

চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং হানহুই গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্ব-শাসিত তাইওয়ানে সফরেরও সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা পুনরুজ্জীবিত করতে, চীন ও রাশিয়াকে আটকাতে এবং প্রধান শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘর্ষকে উসকে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন-তাইওয়ানে একই কৌশল প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে।’

ওয়াশিংটনের তাইওয়ান নীতির সমালোচনা করে ঝাং আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার সবচেয়ে মৌলিক নীতি হলো (কোনো দেশের) অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।

অবশ্য তার এই বক্তব্য ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের যুক্তি হিসেবে খাটে না বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

টিএম