তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেইতে দোকানে ফল কিনছেন এক নারী। ছবিটি ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তোলা

তাইওয়ানের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীন। সামরিক হুমকি ও সতর্কতা উপেক্ষা করে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে যাওয়ায় ভূখণ্ডটির বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বেইজিং।

বুধবার (৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পরিপ্রেক্ষিতে তাইওয়ান থেকে ফল ও মাছ আমদানিতে বুধবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীন। একইসঙ্গে ভূখণ্ডটিতে বালি সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে বেইজিং।

চীনের কাস্টমস প্রশাসন বুধবার জানায়, প্যাকেজে বারবার অতিরিক্ত কীটনাশক শনাক্ত এবং করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় তাইওয়ান থেকে সিটরাস ফল ও মাছ আমদানি স্থগিত করা হবে।

অন্যদিকে পৃথক এক বিজ্ঞপ্তিতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার থেকে তাইওয়ানে প্রাকৃতিক বালি রপ্তানি স্থগিত করবে তারা। তবে এর বেশি আরও কোনো তথ্য জানায়নি মন্ত্রণালয়টি।

তাইওয়ানের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করতে বেইজিংয়ের নেওয়া পদক্ষেপ এটিই প্রথম নয়। এর আগে ২০২১ সালের মার্চ মাসে দ্বীপটি থেকে আনারস আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল চীন। আনারসে কীটপতঙ্গ খুঁজে পাওয়ার অভিযোগ তুলে আমদানি বন্ধের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ওই পদক্ষেপটি আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই বিবেচিত হয়।

এছাড়া বেইজিংয়ের এই সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তাইপের কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার বলেছে, তাইওয়ানের পণ্য আমদানি স্থগিত করার ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করেছে চীন। এই অভিযোগে যেসব পণ্য আমদানি স্থগিত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মৎস্যজাত পণ্য, চা এবং মধুসহ অন্যান্য পণ্যও রয়েছে।

এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ন্যান্সি পেলোসির সফরের প্রধান প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাইওয়ানের চারপাশের অবস্থানগুলোতে সামরিক মহড়া চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বেইজিং। বড় মাপের এই মহড়ায় সরাসরি গোলাবর্ষণের ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তবে চীনের এই পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা করেছে ভূখণ্ডটির সরকার। তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী বলেছে, এই ধরনের মহড়া ‘তাইওয়ানের আঞ্চলিক স্থান আক্রমণ’ এবং ‘তাইওয়ানের আকাশ ও সমুদ্র অবরোধের সমান।’

বিবিসি’র চীন সংবাদদাতা স্টিফেন ম্যাকডোনেল দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি মানচিত্র টুইট করেছেন। ওই মানচিত্রে চীনের পরিকল্পিত মহড়ার অবস্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিকল্পিত এই মহড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে রোববারের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে এর আগেই অবশ্য তাইওয়ান ছাড়বেন ন্যান্সি পেলোসি।

এএফপি বলছে, তাইওয়ানের ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চীনা আক্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে বেঁচে আছেন। তবে এতোদিন সেই হামলা বা আগ্রাসন না হলেও সেই হুমকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অধীনে আরও জোরালো হয়েছে।

গত এক প্রজন্মের মধ্যে শি জিনপিংকে চীনের সবচেয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেতা হিসেবেও উল্লেখ করেছে বার্তাসংস্থাটি।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে পৌঁছান ন্যান্সি পেলাসি। ১৯৯৭ সালের পর এটি কোনো মার্কিন শীর্ষ রাজনীতিকের তাইওয়ান সফর। এই সফরকে কেন্দ্র করে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে।

দফায় দফায় হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই স্পিকারের তাইওয়ান সফরকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি চীন। আর তাই ন্যান্সির সফরের প্রতিক্রিয়ায় রাতেই তাইওয়ানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেয় চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উইউ কিয়ান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। উইউ কিয়ান বলেন, ‘চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং তারা সামরিক অভিযানের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমরা তাইওয়ানের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে অভিযান চালাব।’

এছাড়া বেইজিংয়ে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নসকে মঙ্গলবার গভীর রাতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করে। এসময় চীনা এই মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলে, ওয়াশিংটনকে ‘মূল্য চুকাতে হবে’।

অন্যদিকে চীনের সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জি ফেংকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, ‘তাইওয়ানে পেলোসির সফরের এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত জঘন্য এবং এর পরিণতি হবে অত্যন্ত গুরুতর।’

টিএম