ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তার চলমান এশিয়া সফরে যদি তাইওয়ানে আসেন, তাহলে তা এই অঞ্চলে অশান্তি উস্কে দিতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দিয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন।

মঙ্গলবার রাজধানী মস্কোতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘তিনি (পেলোসি) তাইওয়ান সফরে যাবেন কিনা— সে ব্যাপারে আমরা এখনও নিশ্চিত নই, তার এই সাম্প্রতিক এশিয়ায় আসা ও তাইওয়ানে সম্ভাব্য সফর সম্পূর্ণ উস্কানিমূলক এবং এ সফরের জেরে এশিয়ার এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা যে বিঘ্নিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।’

পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এক রাষ্ট্রীয় সফরের উদ্দেশে সোমবার রাজধানী ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন ন্যান্সি পেলোসি। সফরসূচি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন থেকে প্রথমে সিঙ্গাপুর যাবেন তিনি; দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সেইন ও প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকোবের সঙ্গে বৈঠকের পর মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সফরেরও কথা রয়েছে তার।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে, চলতি এই সফরে তাইওয়ানে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকারের। তারপর থেকে পেলোসির এ সফর নিয়ে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা চলছিল ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে।

এদিকে সোমবারই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান ন্যান্সি পেলোসিকে মার্কিন সরকারের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি পেলোসি তাইওয়ান সফরে আসেন— তাহলে তার পরিণতি খুবই গুরুতর হবে। চীনের সামরিক বাহিনী সেক্ষেত্রে ‘চুপচাপ অলসভাবে বসে থাকবে না’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

চীনের এই হুঁশিয়ারির জবাবে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পেলোসির (তাইওয়ানে) যাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র চীনের হুমকিকে ভয় পায় না। যদিও পেলোসি তাইওয়ানে যাবেন কিনা তা নিশ্চিত করেননি তিনি।

তার পরেই যুক্তরাষ্ট্রকে এই হুঁশিয়ারি দিল চীনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র এবং অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় অংশীদার রাশিয়া।

১৯৪০ সালের গৃহযুদ্ধে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তাইওয়ান। তারপর থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতিকরা নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে দাবি করলেও চীন এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে এখনও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।

৩৬ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ভূখণ্ডের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব এবং প্রায় ৩ লাখ সক্রিয় সেনা সদস্যের একটি সেনাবাহিনী।

এখন পর্যন্ত অবশ্য খুবই অল্প কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকলেও তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনো দূতাবাস খোলেনি দেশটি।

তবে তাইওয়ান বিষয়ক একটি আইনের আওতায় এই স্বাধীনতাকামী দ্বীপভূখণ্ডকে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

যেসব ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে কূটনৈতিক তিক্ততা চলছে, সেসবের মধ্যে প্রধানতম ইস্যু তাইওয়ান। 

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ