‘সর্ব ধর্ম সম্মান’ নীতি গ্রহণ করে বিপাকে ভারতের স্কুল
শিক্ষার্থীদের স্কুল শিক্ষার অংশ হিসেবে ‘সর্ব ধর্ম সম্মান’ বা সব ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নীতি গ্রহণ করেছিল ভারতের বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশের কানপুর জেলার ফ্লোরেটস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেই নীতির কারণেই সৃষ্ট বিতর্কের জেরে ক্ষমা চেয়েছে স্কুলটির কর্তৃপক্ষ।
রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে একটি ভিডিও টুইট করা হয়। সেখানে দেখা যায়, সারিবদ্ধ একদল শিক্ষার্থী স্কুলটির প্রভাতী সমাবেশে (মর্নিং অ্যাসেম্বলি) সমস্বরে কালিমা পাঠ করছে। টুইটের পর অল্প সময়ের মধ্যেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়; এবং সেই ভিডিওর সূত্র ধরে স্কুলের কয়েকজন অভিভাবক থানায় অভিযোগ করেন।
বিজ্ঞাপন
তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সকালে কানপুর জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা ফ্লোরেটস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে যান এবং স্কুলের কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি দেন— ভবিষ্যতে স্কুলের প্রভাতী সমাবেশে আর ‘সর্ব ধর্ম সম্মান’ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে না; তার পরিবর্তে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে।
সোমবার স্কুলটির অধ্যক্ষের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ— ভারতের প্রধান এই চার ধর্মের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিদিন স্কুলের প্রভাতী অধিবেশনে প্রার্থনা সভা হতো। আমরা আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের শেখাতে চেয়েছিলাম যে সব ধর্মের মর্যাদা সমান ও সব ধর্মের প্রতি আমাদের সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।’
‘সেই অনুযায়ী প্রতিদিনের প্রার্থনা সভায় প্রতিটি ধর্মের ভিত্তি হিসেবে পরিচিত কিছু বাণী আবৃত্তি করা হতো। গত ১২-১৩ বছর ধরে প্রতিদিনের প্রভাতী সমাবেশে এই প্রার্থনা সভা হয়ে আসছে। এতদিন (এ বিষয়ে) কোনো অভিযোগ-আপত্তি আসেনি।’
‘কিন্তু এবার যেহেতু আপত্তি উঠেছে, আমরা তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি। এখন থেকে প্রভাতী সমাবেশে আর এই প্রার্থনা সভা হবে না। তার পরিবর্তে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে কানপুর জেলা পুলিশের সহকারী কমিশনার নিশঙ্ক শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ফ্লোরেটস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে মুসলিম শিক্ষার্থীদের পাশপাশি অমুসলিম শিক্ষার্থীদেরও কালিমা পাঠ করানো হচ্ছে— এমন একটি ভিডিওচিত্র আমরা দেখেছি। তারপর কয়েকজন অভিভাবক পুলিশকে অভিযোগ জানানোর পর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটসহ আমি নিজে আজ (সোমবার) বিষয়টি তদন্তের জন্য গিয়েছিলাম।’
‘স্কুলের কর্তৃপক্ষ আমাদের সহযোগিতা করেছেন এবং কথা দিয়েছেন, এখন থেকে আর (স্কুলে) প্রার্থনা সভা হবে না।’
অভিযোগকারী একজন অভিভাবকের সঙ্গেও কথা হয়েছে এনডিটিভির। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ওই স্কুলে পড়ে। কিছুদিন আগে আমি খেয়াল করলাম, সে বাসার ভেতর কালিমা পাঠ করছে।’
‘এতে আমার স্ত্রী খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ছেলের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সে আমাদের বলে, প্রতিদিন প্রভাতী সমাবেশে স্কুলের শিক্ষকরা তাদের এসব শেখান।’
‘আমার অভিযোগ—কেন আমার ছেলেকে কালিমা পাঠ করতে হবে? কিছুদিন পর সে যদি নিজের ধর্মকে অস্বীকার করে, তার দায় কে নেবে?’
এসএমডব্লিউ