রাশিয়া যদি গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তখন কীভাবে চলতে হবে, সেই উপায় খুঁজতে গিয়ে গ্যাসের ব্যবহার কমাতে রাজি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্ররা। মঙ্গলবার ইইউর জ্বালানি মন্ত্রীদের এক বৈঠকে সংকটের মুহূর্তে গ্যাসের ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠকে আলোচনার পর ইইউর সদস্যরা আগামী আগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমিয়ে ফেলতে রাজি হয়। ইইউর বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র চেক রিপাবলিকের জ্বালানি মন্ত্রী এক টুইটে বলেছেন, ‘এটা অসম্ভব মিশন নয়।’

ইইউ বলছে, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি সরবরাহের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো আগামী শীতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ১৫ শতাংশ স্বেচ্ছায় হ্রাস করার বিষয়ে একটি রাজনৈতিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।’

ইউরোপের এই সংস্থা বলেছে, রাশিয়ার সম্ভাব্য সরবরাহ বিঘ্নতার আশঙ্কায় শীতের আগে গ্যাসের চাহিদা হ্রাসের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। কারণ দেশটি জ্বালানিকে ধারাবাহিকভাবে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, যদি সরবরাহ নিরাপত্তা সংকটের পর্যায়ে পৌঁছায় তাহলে ‘ইউনিয়ন সতর্কতা’ ঘোষণা করা হবে। তখন সদস্য দেশগুলোর জন্য গ্যাসের চাহিদা হ্রাস বাধ্যতামূলক হবে।

ইইউ বলেছে, কিছু দেশ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের গ্যাস পাইপ লাইনের সাথে সংযুক্ত নয়। এ কারণে তারা বাধ্যতামূলক গ্যাসের ব্যবহার হ্রাসের যেকোনও আদেশ থেকে অব্যাহতি পাবে। কারণ তারা বিকল্প সরবরাহের উৎস জোগাড় করতে সক্ষম হবে না।

বিদ্যুৎ সরবরাহ সংকটের ঝুঁকি এড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, যেসব দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত নয় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, সেসব দেশকে এই আদেশ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তবে গ্যাসের মজুতের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলে দেশগুলো নতুন এই নিয়ম শিথিল করার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে আবেদন করতে পারবে। একই সঙ্গে কোনও সদস্য দেশ যদি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শিল্পের জন্য গ্যাসের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয় অথবা গ্যাসের ব্যবহার গত পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় গত বছর কমপক্ষে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তাহলেও নিয়ম শিথিলের জন্য অনুরোধ জানাতে পারেবে।

নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইনের টারবাইনের সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রম জার্মানিতে আবারও গ্যাস সরবরাহ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। মস্কোর এই ঘোষণার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি মন্ত্রীদের বৈঠকে গ্যাসের ব্যবহার কমানোর বিষয়ে চুক্তি হয়েছে।

এই পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া। পরে সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যায় রাশিয়ার গ্যাস। কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্ষমতার চেয়ে কম গ্যাস সরবরাহ করছে মস্কো। এদিকে, ইউরোপের বিরুদ্ধে মস্কো ‘গ্যাস যুদ্ধ’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন।

বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং পোল্যান্ড গ্যাসের বিল ইউরো অথবা ডলারের পরিবর্তে রুবলে পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু ক্রেমলিনের এই আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় এসব দেশে গ্যাসের সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে গ্যাজপ্রম। 

গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহ এসেছিল রাশিয়া থেকে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে ইউরোপীয় নেতারা রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর বিষয়ে আলোচনা করে আসছেন।

সূত্র: বিবিসি।

এসএস