সৌদি আরবের বিমান হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ির সামনে ইয়েমেনের এক নাগরিক

সৌদি আরবের কাছে ব্রিটেনের সমরাস্ত্র বিক্রির কারণে ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ত্রাণবিষয়ক সংস্থা অক্সফাম। এর জন্য ব্রিটিশ সরকারকে অভিযুক্ত করেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে বলে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান।

ওই প্রতিবেদনে ইয়েমেনের যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার জন্য ব্রিটেনকে দায়ী করে অক্সফাম বলেছে, রিয়াদের কাছে লন্ডনের সমরাস্ত্র রপ্তানি, বিশেষ করে যুদ্ধবিমানের জ্বালানী সংগ্রহের সরঞ্জাম রপ্তানির কারণে এ যুদ্ধ বন্ধ করা যাচ্ছে না। ওই সরঞ্জামের কারণে ইয়েমেনের ওপর সৌদি যুদ্ধবিমানের এলোপাথাড়ি বোমা হামলা অব্যাহত রাখা সহজতর হয়েছে।

রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত এক প্রদর্শনীতে সৌদি আরবের টাইফুন যুদ্ধবিমানের মডেল দেখছেন অতিথিরা

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, অস্ত্রবিষয়ক বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর গত গ্রীষ্মে সৌদি আরবের কাছে ১৪০ কোটি পাউন্ড সমমূল্যের অস্ত্র বিক্রি শুরু করে ব্রিটেন। বিভিন্ন অস্ত্রের পাশাপাশি এসময় যুদ্ধবিমানের জ্বালানী সংগ্রহের সরঞ্জামও সৌদির কাছে বিক্রি করে ব্রিটিশ সরকার। এর ফলে যুদ্ধবিমানগুলো দীর্ঘ সময় আকাশেই উড়তে পারবে।

অক্সফামের পলিসি ও অ্যাডভোকেসি প্রধান স্যাম নাদেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বললেও যুক্তরাজ্য হাঁটছে ঠিক এর বিপরীত দিকে। সৌদি আরবের কাছে ক্রমবর্ধমান অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার সৌদি-নেতৃত্বাধীন বর্বর এই হামলাকে সমর্থন করছে। এছাড়া যুদ্ধবিমানের জ্বালানী সংগ্রহের সরঞ্জাম বিক্রির ফলে ইয়েমেনে সৌদি আরবের এলোপাথাড়ি বোমা হামলায় সুবিধা হচ্ছে।’

যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী জীবনযাপন করছে ইয়েমেনের লাখ লাখ সাধারণ মানুষ

অক্সফামের মতে, ইয়েমেনের মারিব শহরের ডজন ডজন ক্যাম্পে আট লাখ ৫০ হাজার শরণার্থী বসবাস করছে। সম্প্রতি ওই শহরে সফরে যাওয়া সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বহু মানুষকে রাস্তায়, এমনকি বাড়ির দরজার সামনে অবস্থান করতে দেখেন।

আর তাই যুদ্ধ বন্ধ করে জরুরি ভিত্তিতে উভয়পক্ষকে অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটিশ এই দাতব্য সংস্থাটি। একইসঙ্গে ইয়েমেন যুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে এমন সব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সৌদি আরবের কাছে বিক্রি বন্ধ করতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

শান্ত ও স্থিতিশীল ইয়েমেনকে সমর্থন করে যুক্তরাজ্য। এটা যদি সত্য হয় তাহলে ইয়েমেন যুদ্ধে ব্যবহার এবং মানবিক সংকট আরও বাড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি আছে এমন সব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সৌদি আরবের কাছে বিক্রি বন্ধ করতে হবে বরিস জনসনের সরকারকে

অক্সফামের পলিসি ও অ্যাডভোকেসি প্রধান স্যাম নাদেল

যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও কয়েকটি দেশের সমর্থন নিয়ে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে সৌদি আরব। একইসঙ্গে স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে ইয়েমেনের ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি মাসের শুরুতে মানবিক ও কৌশলগত বিপর্যয় বলে অভিহিত করে ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানে ওয়াশিংটনের সমর্থন বন্ধের ঘোষণা দেন জো বাইডেন।

সেসময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ইয়েমেন আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ। দেশটিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হামলা মানবিক ও কৌশলগত বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে।

এর আগে প্রেসিডেন্ট হিবে দায়িত্ব নেওয়ার সপ্তাহখানেকের মাথায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করে বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে কেনা এই অস্ত্র দিয়েই মূলত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালাতো দেশ দুটি।

ইয়েমেনের ওপর সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের হামলায় এ পর্যন্ত ১৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। বর্তমানে দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই মানবিক ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

২০১৫ সালে ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল-হাদি দেশটির হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পালিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট হাদিকে ক্ষমতায় বসানোর লক্ষ্যে হুথিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে হামলা শুরু করে। হুথিরা বলছে, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

টিএম