শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দিনেশ গুণাবর্ধনে। শুক্রবার (২২ জুলাই) দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপরই শপথ নেন শ্রীলঙ্কান পার্লামেন্টের জ্যেষ্ঠ এই সদস্য।

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া দিনেশ গুণাবর্ধনেকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে তথা প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের মিত্র বলেই অনেক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে তার স্কুল সহপাঠী দিনেশ গুণাবর্ধনেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। ৭৩ বছর বয়সী গুণাবর্ধনে নিজেও বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য।

মূলত মধ্যরাতে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে রাজধানী কলম্বোর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে গত ১০৪ দিন ধরে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া এবং তাদের বেশ কয়েকজনকে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর গুণাবর্ধনেকে নিয়োগ দেওয়া হলো।

রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহের উপস্থিতিতে শুক্রবার শপথ নেন শ্রীলঙ্কার শাসক দল পোডুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি)-এর একজন সাবেক মন্ত্রী দিনেশ গুণাবর্ধনে। এসময় আইনপ্রণেতা এবং কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সেখানে ইউনিফর্ম পরা সামরিক অফিসাররা সামনে বসে ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যরা শুক্রবারই শপথ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না।

ফলে নজিরবিহীন এই সংকটের জন্য রাজাপাকসে পরিবারসহ দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারকে দায়ী করে শ্রীলঙ্কায় গণআন্দোলন প্রকট আকার ধারণ করেছে। আন্দোলনের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আগেই পদত্যাগ করেছিলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এমনকি রাজাপাকসে পরিবারের অন্য সদস্যরাও সরকার থেকে সরে এসেছিলেন।

বাকি ছিলেন কেবল দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। গত সপ্তাহের বুধবার তার পদত্যাগের কথা থাকলেও দিনের আলো ফোটার আগেই সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পাড়ি জমান তিনি। পরে ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে তিনিও আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ ছাড়েন।

এরপর গত ১৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। গত ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। আর আজ নতুন প্রধানমন্ত্রী পেল শ্রীলঙ্কা।

টিএম