প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে কখনও গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে, কখনও প্রেসিডেন্টের পালঙ্কে, সোফায় বসে, আবার কখনও বাগানে দাঁড়িয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ছবি তুলেছেন শ্রীলঙ্কার এক তরুণী। পেছনে বিক্ষোভ করছেন শত শত মানুষ। বিক্ষোভরত জনতার সামনে প্রেসিডেন্টের ব্যবহৃত আসবাবপত্রের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা তরুণীর ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল।

১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। বর্তমানে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বলতে আর কিছুই নেই। ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত শ্রীলঙ্কা খাবার, ওষুধ, জ্বালানির মতো অতি জরুরি আমদানিও করতে পারছে না।

বিক্ষোভকারীদের পদত্যাগের দাবির মুখে ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। এর আগে গত, শনিবার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভের মাঝেই সেখানে ঘুরে বেড়ান আর একের পর এক ছবি তোলেন মধুহংসী হাসিনথারা নামের ওই তরুণী।

১২ জুলাই ফেসবুকে ২৬টি ছবি পোস্ট করেছেন কলম্বোর বাসিন্দা মধুহংসী। সঙ্গে লিখেছেন, ‘কলম্বোয় প্রেসিডেন্টের বাসভবনে।’ তবে অনলাইনে অনেকেই তরুণীর এমন কাণ্ড ভালোভাবে নেননি। একজন লিখেছেন, ‘আপনি নিজের দেশকেই ঠাট্টা করছেন।’ অন্য একজন লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার নতুন পর্যটনস্থল।’

তবে মধুহংসী একা নন। ছবিতে দেখা গেছে, আরও অনেকেই প্রেসিডেন্ট ভবনে বেড়াতে এসেছেন, ছবি তুলছেন। কারও সঙ্গে রয়েছে বাচ্চা। এর আগে বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে সুইমিং পুলে নেমে পড়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। কেউ আবার প্রেসিডেন্টের পালঙ্কে শুয়ে আছেন। একদল আবার রান্নাঘরে ঢুকে রান্নাও করেছেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মালদ্বীপ থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরে পৌঁছান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। সেখান থেকে ই-মেইলে তিনি স্পিকার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন।  

স্পিকার আবেবর্ধনে জানান, পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ জুলাই থেকে গোতাবায়া আর প্রেসিডেন্ট থাকছেন না। সব দায়িত্ব থেকে তিনি পদত্যাগ করলেন। 

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একটি সামরিক বিমানে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপে পালিয়ে যান। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ অনুমোদনের পর প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে এবং তার স্ত্রী কাতুনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুই দেহরক্ষীসহ মালদ্বীপে পাড়ি জমান। 

বুধবার রাতেই মালদ্বীপ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে নির্ধারিত ফ্লাইটে তিনি আরোহণ করেননি। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে  যান তিনি। 

এসএস