ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির পরবর্তী নেতা তথা দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আরও এগিয়ে গেছেন সাবেক ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটেও সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সেকেন্ড রাউন্ডের ভোটাভুটিতে ১০১ ভোট পান বরিস জনসন সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। প্রথম রাউন্ডের মতো এদিনও কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ ভোট পান।

ঋষির পরেই আছেন ব্রিটেনের জুনিয়র বাণিজ্য মন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট। তিনি ৮৩টি ভোট পেয়েছেন। আর এরপরই ৬৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেলারেল সুয়েলা ব্রেভারম্যান ২৭টি ভোট পেয়ে এই নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েন। প্রথম রাউন্ডে তিনি পেয়েছিলেন ৩২ ভোট।

প্রসঙ্গত, বুধবারও প্রথম রাউন্ডের ভোটাভুটিতে ঋষি সুনাক সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন। সেদিন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে ৮৮ টি ভোট পেয়ে শীর্ষে ছিলেন তিনি। এদিনও টিকে যাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে সুয়েলা সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছিলেন।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনকের বয়স ৪২ বছর। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বরিস জনসন তাকে প্রথম পূর্ণ মন্ত্রিসভা পদ অর্থাৎ অর্থমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করেছিলেন। করোনা মহামারি চলাকালীন ব্যবসা এবং কর্মচারীদের সাহায্য করার জন্য কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি বিশাল প্যাকেজ তৈরির পর ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ঋষি।

তবে স্ত্রীর নন-ডোমেস্টিক ট্যাক্স, নিজের ইউএস গ্রিন কার্ড এবং ব্রিটেনের জীবনযাত্রার খরচের সংকটে প্রতিক্রিয়া জানানোর বিষয়ে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঋষি। কোভিড লকডাউন অমান্য করার জন্য এবং ডাউনিং স্ট্রিট সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্যও জরিমানা করা হয় ঋষির।

ঋষি সুনকের দাদা-দাদী ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা ছিলেন। আর ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তির কন্যা অক্ষতা মূর্তি হচ্ছেন ঋষির স্ত্রী। তাদের দুই কন্যাও রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়াতে পড়াশোনা করার সময় তাদের পরিচয় হয়। সেই ঋষি যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তা হলে তিনিই হবেন প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বরিস জনসন সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। মূলত ‘পার্টিগেট’ থেকে শুরু হয়েছিল জনসন সরকারের ভাবমূর্তির পতন। ব্রিটেনে কঠোর কোভিড লকডাউন চলাকালে সরকারি বাসভবনে মদের পার্টি বসানো নিয়ে দলের মধ্যেই অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হয়েছিলেন বরিস।

এরপর থেকে একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে জনসন সরকার। কনজারভেটিভ পার্টির ডেপুটি চিফ হুইপ ক্রিস পিনচার-এর যৌন কেলেঙ্কারি কফিনে শেষ পেরেক মেরে দেয়। মত্ত অবস্থায় এক ব্যক্তির পুরুষাঙ্গ চেপে ধরার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন পিনচার। প্রথম থেকে পুরোটা জেনেও, অস্বীকার করেছিলেন বরিস। পরে তার মিথ্যাচার ধরা পড়ে যায়।

এরপরই জনসন সরকারের অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন ঋষি সুনাক। যার সূত্র ধরে একের পর এক সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ইস্তফা দেন এবং বরিস জনসনও পদ ছাড়তে বাধ্য হন।

টিএম