অনুগতদের পক্ষ থেকে পদত্যাগের ডাকের জবাবে তাদের বরখাস্ত করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ক্ষমতার ভিত কাঁপছে ৪০ জনের বেশি মন্ত্রী ও শীর্ষ সহযোগী পদত্যাগ করায়। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জনসনের সরকারের ৪০ জনের বেশি মন্ত্রী, সহযোগী পদত্যাগ করেছেন। রাতারাতি এই পদত্যাগের তালিকা আরও বড় হচ্ছে।

স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, বুধবার কনজারভেটিভ দলীয় এই নেতা বিভিন্ন দিক থেকে চাপের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি মন্ত্রিসভার সদস্যরাও তাকে বলেছেন, এখন চলে যাওয়ার সময় এসেছে।

‘টরি পার্টি এবং দেশের কল্যাণের জন্য’ প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে বলে মন্তব্য করার পর দেশটির গৃহায়ন, সম্প্রদায় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মাইকেল গোভকে বরখাস্ত করেছেন জনসন। জনসনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, জনসনের ঘনিষ্ঠ এই মিত্রকে ‘সাপ’ হিসেবে মনে করা হয়।

ব্রিটেনের ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোট প্রচারণায় বরিস জনসনের ডান হাত হিসেবে কাজ করেছেন গোভ। কিন্তু একই বছরে তিনি অনেকটা নাটকীয়ভাবে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনে জনসনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৯ সালেও কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনেও অংশ নেন গোভ।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সান বলছে, জনসন তার সহকর্মীদের বলেছেন যে, তাকে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার জন্য তাদের হাত রক্তে ডুবাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মিত্ররা বলেছেন, তিনি লড়াই চালিয়ে যেতে চান। ব্রিটেনের এই প্রধানমন্ত্রীর সংসদীয় ব্যক্তিগত সচিব (পিপিএস) জেমস দুদ্রিজ স্কাই নিউজকে বলেছেন, জনসন ‘উচ্ছ্বল মেজাজে’ আছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ব্রিটেনের সংবাদপত্রে কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত বরিস জনসন যে বেকায়দায় পড়েছেন তা গুরুত্বসহ তুলে ধরা হয়।

সাধারণত কনজারভেটি-পন্থী হিসেবে পরিচিত ডেইলি এক্সপ্রেসও জনসনের ‘শেষ অবস্থান’ সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এছাড়া ডেইলি টেলিগ্রাফ জনসনকে ‘মারাত্মক আহত’ এবং দ্য টাইমস ‘জীবন বাঁচানোর লড়াই করছেন জনসন’ বলে প্রতিবেদন ছেপেছে। 

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে দেশটির আরেক দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জনসনকে ‘বেপরোয়া এবং বিভ্রান্ত’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।

‘কার্যকর সরকার নেই’

মঙ্গলবার ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের পথ ধরে সরকার থেকে পদত্যাগের হিড়িক শুরু হয়। মাতাল অবস্থায় দু’জন পুরুষকে হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ এমপি ক্রিস পিচারকে সংসদের ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় তারা পদত্যাগ করেন।

দুই মন্ত্রীর পদত্যাগের পর ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের এক ঘোষণায় বলা হয়, এমপি ক্রিস পিচারের বিরুদ্ধে আগের অভিযোগের ব্যাপারে অবগত ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তবে ডাউনিং স্ট্রিটের এমন আত্মরক্ষামূলক স্বীকারোক্তি ধোপে টিকেনি।

সংসদীয় একটি কমিটির দীর্ঘ এক বৈঠক থেকে ডাউনিং স্ট্রিটে ফেরার পর বুধবার মন্ত্রিসভার সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছিলেন বরিস জনসন। সেই সময় কট্টরপন্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল এবং ঋষি সুনাকের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নাদিম জাহাবিকে নতুন করে নিযুক্ত করার কথা বলা হয়। যদিও পরবর্তীতে পিপিএস দুদ্রিজ এই তথ্য অস্বীকার করেছেন।

বুধবার সন্ধ্যার দিকে জনসনের মন্ত্রিসভার তৃতীয় সদস্য হিসেবে ওয়েলস মন্ত্রী সিমন হার্ট পদত্যাগ করেন। ওই রাতে একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং অপর একজন পিপিএসের পদত্যাগের মাধ্যমে অন্তত ৪৪ জন মন্ত্রী এবং সহযোগী সরকার থেকে পদত্যাগ করেন।

ডাউনিং স্ট্রিটের নীতি নির্ধারণী শাখার সাবেক প্রধান ক্যামিলা ক্যাভেন্দিস বিবিসিকে বলেছেন, ব্রিটেনে এখন আর কার্যকর কোনও সরকার নেই। জনসনকে পদত্যাগের আহ্বান বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জোরাল ছিল। 

আইটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল সুয়েলা ব্রাভারম্যান বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। তবে এখন বিদায় বলার সময় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে নেতৃত্ব নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দিতায় অংশ নেবেন তিনি।

এসএস