কঙ্গোর খনিজ-সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড ও সম্পদের দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে মিলিশিয়ারা

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে কঙ্গোলিজ এক তরুণীকে দু’বার অপহরণ করা হয়। তাকে আটকে রেখে বারবার ধর্ষণও করেন অপহরণকারীরা। শুধু তাই নয়, জোর করে মানুষের মাংস রান্না এবং তা খেতে বাধ্য করা হয়। কঙ্গোর স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে এই তথ্য জানিয়েছে।

দেশটির নারী অধিকারবিষয়ক সংস্থা ফিমেল সোলিডারিটি ফর ইন্টিগ্রেটেড পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এসওএফইপিএডিআই) প্রধান জুলিয়েন লুসেঞ্জ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের এক নারীর ভয়াব্হ এই অভিজ্ঞতার কথা ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে তুলে ধরেছেন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কঙ্গোর সংঘাত-সহিংসতা বিষয়ে নিয়মিত ওই বৈঠক আহ্বান করেছিল। মধ্য আফ্রিকার এই দেশটির সরকার এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে গত মে মাসের শেষের দিক থেকে তীব্র লড়াই চলছে।

জুলিয়েন লুসেঞ্জ বলেছেন, পরিবারের অপহৃত অপর এক সদস্যের মুক্তিপণ দিতে গিয়ে কোডেকো মিলিশিয়াদের হাতে বন্দি হন ওই তরুণী। দেশটির মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোকে তিনি বলেছেন, তাকে বারবার ধর্ষণ ও শারীরিকভাবে নিপীড়ন করা হয়েছে। মিলিশিয়ারা এক ব্যক্তির গলাও কেটে ফেলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

‘তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা হয় এবং সেগুলো আমাকে রান্নার নির্দেশ দেন। বাকি খাবার প্রস্তুত করার জন্য তারা দুটি পানির পাত্র আনেন। এরপর তারা সব বন্দিকে মানুষের মাংস খেতে বাধ্য করেন।’ লুসেঞ্জ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ওই তরুণীর রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, কিছুদিন পর ওই নারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর বাড়িতে ফেরার চেষ্টার সময় অপর একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী তাকে অপহরণ করে। এবার এই গোষ্ঠীর সদস্যরাও তাকে আটকে রেখে উপর্যুপরি ধর্ষণ করেন।

শেষ পর্যন্ত পালিয়ে আসা ওই নারী এসওএফইপিএডিআইকে বলেছেন, ‘আবারও আমাকে মানুষের মাংস রান্না করে খেতে বলা হয়েছিল।’ 

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে কঙ্গোর ভয়াবহ এই পরিস্থিতির কথা তুলে ধরলেও লুসেঞ্জ দ্বিতীয় মিলিশিয়া গোষ্ঠীটির নাম প্রকাশ করেননি। এই বিষয়ে কোডেকো গোষ্ঠীর মন্তব্যও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

কঙ্গোতে যে কয়েকটি সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠী রয়েছে, তার একটি হচ্ছে কোডেকো। কঙ্গোর খনিজ-সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড ও সম্পদের দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে মিলিশিয়ারা। এই সংঘাতে গত এক দশকে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গত মে মাসের শেষের দিক থেকে এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যদের সাথে কঙ্গোর সামরিক বাহিনীর তীব্র সংঘর্ষ চলছে। ২০১২-১৩ সালের পর এবারের এই সংঘর্ষকে সবচেয়ে ব্যাপক বলা হচ্ছে; যা কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়েছে।

এদিকে, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কঙ্গোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা মোতায়েন রয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস