সন্তানের জন্মের ১২ দিন আগে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা ২০ বছর বয়সী ছাত্রী জেস ডেভিসের তোলা ছবি

সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার আগে পেটের ব্যথা শুরু হয় ব্রিটেনের এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর। প্রাকৃতিক কাজ সারবেন ভেবে টয়লেটে যান তিনি। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর জন্ম দেন ফুটফুটে এক সন্তান। আর এই ঘটনায় নিজেকে বিশ্বাসও করতে পারছেন না ওই ছাত্রী। কারণ তিনি যে গর্ভবতী, সেটি কখনই অনুভব করতে পারেননি।

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা ২০ বছর বয়সী ছাত্রী জেস ডেভিসের আকস্মিক সন্তান জন্মদানের ঘটনা দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, সন্তান গর্ভে ধারণের ব্যাপারে কোনও ধারণাই ছিল না জেসের। তবে পিরিয়ডের কারণে পেট ব্যথা করছে বলে প্রথমে ধারণা করেছিলেন তিনি।

ব্রিটেনের বিস্টলের ইতিহাস এবং রাজনীতির এই ছাত্রীর নিশ্চিত গর্ভ ধারণের কোনও আগাম লক্ষণ ছিল না। এমনকি বেবি বাম্পও তেমন ছিল না তার।

গত ১১ জুন টয়লেটে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন জেস। আকস্মিক মাতৃত্বের স্বাদ উপভোগ করা এই তরুণী ছেলের নাম রেখেছেন ফ্রেডি ওলিভার ডেভিস। ওইদিন স্থানীয় সময় বিকেল পৌনে ৫টার দিকে জন্ম নেওয়া ফ্রেডি ওলিভারের ওজন প্রায় আড়াই কেজি। বর্তমানে মা ও ছেলে সুস্থ আছেন। একটি হাসপাতালে রয়েছেন তারা।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নতুন এই মা বলেছেন, বেশিরভাগ সময়ই আমার পিরিয়ড অনিয়মিত ছিল। যে কারণে আমি বিষয়টি সত্যিই খেয়াল করতে পারিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই বমি বমি ভাব অনুভব করতাম। আর এজন্য আমি নতুন প্রেসক্রিপশন নেওয়া শুরু করেছিলাম। নতুন ওষুধও সেবন করছিলাম।’ 

‘যখন সে জন্ম নিল তখন এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো স্বপ্ন দেখছি। তার কান্না শোনার আগে পর্যন্ত আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’ 

জেস বলেন, ‘এটা হঠাৎ করেই আমাকে আঘাত করল যে, আমার এখন সত্যিই বেড়ে ওঠা দরকার। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়েছি। তার সাথে আমার বন্ধন তৈরি হয়েছে। এখন আমার মনে হয়, আমি চাঁদে বসবাস করছি।’

‘সে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শান্ত শিশু। হাসপাতালের ওয়ার্ডে সে একদম শান্ত শিশু হিসেবে পরিচিত।’

ওইদিন প্রচণ্ড পেট ব্যথা শুরু হয় জেসের। তখন তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে, হয়তো পিরিয়ডের শুরু হতে যাচ্ছে। পরে গরম পানির বোতল কেনার জন্য স্থানীয় একটি দোকানে চলে যান তিনি। জেস বলেন, আমি ঠিকভাবে হাঁটতেও পারছিলাম না। বাসায় ফেরার পর বিছানায় শুতেও পারছিলাম না।

‘পরের দিন আমার জন্মদিন ছিল। সে কারণে ওই রাতে ‘হাউস পার্টি’ হওয়ার কথা ছিল। আমি এ জন্য গোসলও করেছিলাম; যাতে শারীরিকভাবে আরও ভালো লাগে। কিন্তু পেটের ব্যথা খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে থাকে।’

ব্রিস্টলের এই তরুণী বলেন, তিনি টয়লেটে যাওয়ার জন্য প্রচণ্ড চাপ অনুভব করেন। পরে টয়লেটে যান তিনি। জেস বলেন, কখনই আমার মনে হয়নি যে, আমি সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছি। আমি শুধু জানতাম আমাকে টয়লেট সারতে হবে। আমি জানতাম এটা আমার করতেই হবে। কিন্তু তার কান্না শুনে এবং আসলে যা ঘটছে তা বোঝার পর সবকিছুই আমার কাছে ‘অবাস্তব’ মনে হচ্ছিল।

কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না জেস। কারণ সেদিন একাই ছিলেন বাসায়। পরে তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু লিভ কিংকে (২০) টেলিফোন করে ঘটনার বিষয়ে জানান। লিভের পরামর্শে সন্তানের নামের মাঝের অংশ ‘ফ্রেডি’ রাখেন জেস। 

এটা জানার পর জরুরি নম্বরে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন লিভ। কিন্তু প্রথমে লিভও এই ঘটনা বিশ্বাস করতে চাননি। তাকে সদ্যজাত শিশুর ছবি পাঠানোর পর অ্যাম্বুলেন্সের কাছে ফোন করেন। 

পরে সাউদাম্পটনের প্রিন্সেস অ্যানি হাসপাতালে নেওয়া হয় মা ও সদ্যজাত শিশুকে। সেখানে শিশু ফ্রেডিকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়।

মাত্র ৩৫ সপ্তাহেই শিশুটি জন্ম নিয়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। নাটকীয় এই জন্মের পরও শিশু ও তার মা সুস্থ আছেন। জেসের এই ঘটনা তার মা কিং জানার পর ভেঙে পরেন। মেয়েকে টেলিফোন করে জানতে চান, তুমি কী সুস্থ আছো?

সৌভাগ্যবশত জেসের মা নতুন নাতিকে পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছেন এবং মেয়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি নানি হতে পেরে আনন্দিত বলে জানিয়েছেন। জেস বলেছেন, আমার মা এই বিশ্বের সেরা মানুষ। তিনি অত্যন্ত সহায়তা করছেন। 

তিনি বলেন, ফ্রেডির জন্য আমার ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এটা অবিশ্বাস্য। আমি সবসময় শুধু তার কথাই চিন্তা করি। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর হচ্ছি। এখন আমি তার বেড়ে ওঠা এবং জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ দেখার জন্য মুখিয়ে আছি।

সূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, এনডিটিভি।

এসএস