সাত দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হওয়া শ্রীলঙ্কায় এবার ‘জরুরি নয়’ এমন যানবাহনের জন্য পেট্রল বিক্রি স্থগিত করা হয়েছে। নতুন এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী দুই সপ্তাহ দেশটিতে কেবল বাস, ট্রেন এবং ওষুধ ও খাদ্যপণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের জন্য জ্বালানি কেনা যাবে।

এর আগে, সোমবার দেশটির রাজধানী কলম্বো এবং এর আশপাশের এলাকায় স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের এই দেশটির কর্মকর্তাদের বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। জ্বালানি সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশটির যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা।

বর্তমানে শ্রীলঙ্কার জ্বালানি তেলের পাম্পগুলোতে সেনা প্রহরা বসানো হয়েছে। যারা জ্বালানি কিনতে আসছেন, সেনা সদস্যদের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে পাম্পের সামনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। পাম্পে তেলের সরবরাহ এলে তবেই পেট্রোল, ডিজেল কিনতে পারছেন তারা।

চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধানে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে বেলআউটের আবেদন করেছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লঙ্কান সরকারের আলাচনা শুরু হয়েছে।

সোমবার শ্রীলঙ্কার সরকার জানায়, আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত দেশে ব্যক্তিগত যানবাহনের পেট্রল এবং ডিজেল কেনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশটির মন্ত্রিসভার মুখপাত্র বানডুলা গুনেওয়ার্দেনা বলেছেন, শ্রীলঙ্কা তার ইতিহাসে কখনই এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়নি।

নগদ অর্থ সংকটে ধুঁকতে থাকা এই দেশটি ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রধান জ্বালানি উৎপাদনকারী রাশিয়া এবং কাতারে সরকারি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। সস্তা তেল সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে লঙ্কান প্রতিনিধিরা দেশ দু’টি সফরে গেছেন।

১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 

রোববার লঙ্কান সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে আর মাত্র ৯ হাজার টন ডিজেল ও ৬ হাজার টন পেট্রল মজুত আছে। যা মাত্র কয়েকদিন জরুরি সেবায় ব্যবহার করা যাবে। দেশটির নিয়মিত চাহিদা পূরণ করতে গেলেও এই জ্বালানি দিয়ে এক সপ্তাহ অথবা তারও কম সময়ের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে।

রোববার দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী কাঞ্চন উইজেসেকেরা সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা নতুন করে জ্বালানি মজুতে সম্ভাব্য সবকিছুই করছি। কিন্তু জ্বালানির সরবরাহ কখন মিলবে তা আমরা জানি না। 

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ অ্যালেক্স হোমস বিবিসিকে বলেছেন, পরিস্থিতি যে আরও গুরুতর আকার ধারণ করছে, জ্বালানি বিধি-নিষেধ তারই আরেকটি লক্ষণ। 

গত মে মাসে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণদাতাদের পাওনা পরিশোধে অক্ষমতা ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। গত সপ্তাহে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ৩ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে শ্রীলঙ্কা পৌঁছায়। এছাড়া দেশটির সরকার শ্রীলঙ্কা এবং চীনের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য সামগ্রী আমদানিতে সহায়তা চেয়েছে।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

এসএস