একদিনে ৮১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের মাত্র দু’দিন পর ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত রেকর্ড করা এই বৃষ্টিপাত চেরাপুঞ্জিতে গত ১২২ বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ এবং ১৯৯৫ সালের পর সর্বোচ্চ। শনিবার ভারতের আবহাওয়া বিভাগের (আইএমডি) বরাত দিয়ে দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আইএমডি বলছে, ১৯০১ সালে আইএমডি রেকর্ড রাখা শুরু করার পর থেকে চেরাপুঞ্জিতে অন্তত ৯ বার শুধুমাত্র জুনেই ৮০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আসামের গুয়াহাটির আইএমডির আঞ্চলিক কেন্দ্রের বিজ্ঞানী সুনিত দাস বলেছেন, চলতি মাসে শুক্রবার পর্যন্ত চেরাপুঞ্জিতে মোট ৪ হাজার ৮১ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় শেষ হওয়া আগের ২৪ ঘণ্টায় পূর্ব খাসি পাহাড়ে অবস্থিত শহরটিতে ৮১১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

১৯৯৫ সালের ১৬ জুন চেরাপুঞ্জিতে এক হাজার ৫৬৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তার একদিন আগে অর্থাৎ ১৯৯৫ সালের ১৫ জুন সেখানে ৯৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। পার্বত্য এই অঞ্চলে ১৯৫৬ সালের ৫ জুন ৯৭৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছিল।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা পিটিআইকে সুনিত দাস বলেন, চেরাপুঞ্জিতে সব সময় এভাবে বৃষ্টি হয় না। বছরে একবার অথবা দু’বার সেখানে ৫০-৬০ সেন্টিমিটারের বৃষ্টি স্বাভাবিক। কিন্তু ৮০ সেন্টিমিটার এবং তারও বেশি বৃষ্টি একেবারে স্বাভাবিক নয়।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এই অঞ্চলে মেঘ বিরাজ করছে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের বাতাস বঙ্গোপসাগর থেকে ক্রমাগত প্রচুর আর্দ্রতা নিয়ে আসছে। এই বাতাস খাসিয়া পাহাড়ের গায়ে আঘাত করছে। যে কারণে বৃষ্টি ঝরছে।

চেরাপুঞ্জিতে বৃহস্পতিবার ৬৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার, বুধবার ৮১১ দশমিক ৬ মিলিমিটার, মঙ্গলবার ৬২ দশমিক ৬ মিলিমিটার, সোমবার ২৯৩ মিলিমিটার এবং রোববার ৩৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

দাস বলেছেন, প্রবল বৃষ্টিপাতের এই ধারা আরও এক অথবা দু’দিন অব্যাহত থাকতে পারে। তারপর তীব্রতা হ্রাস পাবে।

ভারতের সবচেয়ে আর্দ্র স্থান মাওসিনরামের অবস্থান চেরাপুঞ্জি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টায় শেষ হওয়া ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৭১০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে; যা ১৯৬৬ সালের জুনের পর একদিনে সর্বোচ্চ।

১৯৬৬ সালের ১০ জুন মাওসিনরামে ৭১৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। একই বছরের ৭ জুন ৯৪৪ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল সেখানে। এটিও আইএমডি রেকর্ড রাখা শুরু করার পর জুনে মাওসিনরামে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

২০১৫ সালের ৮ জুন এই শহরটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৬২৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছিল।

সুনিত দাস বলেছেন, বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে আর্দ্র স্থান মাওসিনরাম। সেখানে বার্ষিক (১৯৭৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত) গড়ে ১১,৮০২ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর চেরাপুঞ্জিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয় ১১,৩৫৯.৪ মিলিমিটার।

এদিকে, ভারতের আবহাওয়া বিভাগ মেঘালয় এবং আসামে আগামী দু’দিন অত্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। একই সঙ্গে এই দুই অঞ্চলে আবহাওয়ার রেড সতর্কতা জারি করেছে সংস্থাটি।

গত ১ জুন বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলে ২২০ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা ওই দুই অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি।

মেঘালয়ে গত ১ জুন থেকে ৮৬৫ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে; এই বর্ষণও স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫৩ শতাংশ বেশি। এছাড়া অরুণাচল প্রদেশে ২৫৩ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অরুণাচলে এই বৃষ্টিও স্বাভাবিকের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, আসামে ৩৭২ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে; যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৭৯ শতাংশের বেশি।

তবে এই অঞ্চলের সব রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাত দেখা যায়নি। মণিপুর, মিজোরাম এবং ত্রিপুরায় যথাক্রমে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০, ৪৬ এবং ৩৮ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড বৃষ্টিপাত বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ। এছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জে গত দু’দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে আগামী দু’দিন প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে ভারতের আবহাওয়া দফতর সতর্ক করে দিয়েছে। যে কারণে সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ।

এসএস