আমরা ইউক্রেন আক্রমণ করিনি: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করেনি বলে দাবি করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তার দাবি, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চলছে এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোতে টেনে আনা যে একটি অপরাধমূলক কাজ সেটি পশ্চিমাদের বোঝাতেই এটি করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া বিরল এক সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ এই মন্তব্য করেন। এমনকি সত্য উদঘাটন না করার অভিযোগে সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে অভিযুক্তও করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, প্রায় চার মাস আগে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে দেশটিতে হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন এবং দেশটির বহু শহর পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। একইসঙ্গে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ওই সংবাদকর্মীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন, ঘটনাগুলো যেমন মনে হচ্ছে সেগুলো আসলে তেমন নয়।
এরপর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, ‘আমরা ইউক্রেন আক্রমণ করিনি। আমরা একটি বিশেষ সামরিক অভিযান ঘোষণা করেছি কারণ আমাদের কাছে পশ্চিমাদের বোঝানোর কোনো উপায় ছিল না যে, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে টেনে আনা একটি অপরাধমূলক কাজ।’
রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে সের্গেই ল্যাভরভ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোকে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বৃহস্পতিবারের এই সাক্ষাৎকারেও ক্রেমলিনের সেই আগের দাবিরই পুনরাবৃত্তি করেন যে, ইউক্রেনে নাৎসি ছিল।
রাশিয়ান কর্মকর্তারা প্রায়ই দাবি করেন যে, তাদের সামরিক বাহিনী ইউক্রেনকে ‘ডি-নাজিফাই’ বা ‘নাৎসিবাদ-মুক্ত’ করার কাজ করছে। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শরীরে অ্যাডলফ হিটলারের ‘ইহুদি রক্ত’ রয়েছে জানিয়ে সম্প্রতি ক্রেমলিনের নাৎসি স্লোগানকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ল্যাভরভ।
এই পর্যায়ে চেরনিহিভ অঞ্চলের ইউক্রেনীয় গ্রাম ইয়াহিদনে সম্পর্কে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনের সূত্র দিয়ে বলা হয়, রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণের কারণে ৭৪ জন শিশু ও পাঁচজন প্রতিবন্ধী-সহ ৩৬০ জন বাসিন্দা টানা ২৮ দিন একটি স্কুলের বেসমেন্টে থাকতে বাধ্য হয়েছিল... সেখানে কোনো টয়লেট সুবিধা ছিল না, ছিল না খাবার পানীয়ও... পরে ১০ জন বয়স্ক মানুষ মারা যান।
এটা কি নাৎসীদের বিরুদ্ধে লড়াই কি না তা জানতে চাওয়া হয়। জবাবে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘এটি বড় দুঃখের বিষয়। কিন্তু জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং জাতিসংঘের অন্যান্য প্রতিনিধি-সহ আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা পশ্চিমাদের চাপের মধ্যে রয়েছে। এবং প্রায়শই তারা পশ্চিমাদের ছড়ানো ভুয়া খবরকে প্রসারিত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া পুরোপুরি ত্রুটিহীন নয়। রাশিয়া আসলে যা, সেটাই। এবং আমরা কে তা দেখাতে আমরা লজ্জিত নই।’
গত ১৮ বছর ধরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন ৭২ বছর বয়সী সের্গেই ল্যাভরভ। তবে ইউক্রেনে আক্রমণের জেরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো এখন তার এবং তার মেয়ে উভয়ের ওপরই আরোপ করা হয়েছে।
এই পর্যায়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের বিষয়টি টেনে আনা হয়। ইউরোপের এই দেশটি রাশিয়ার বন্ধুত্বহীন দেশগুলোর সরকারি তালিকায় রয়েছে। ল্যাভরভ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে আর কোনো কৌশল করার জায়গা আছে। কারণ (প্রধানমন্ত্রী বরিস) জনসন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী (লিজ) ট্রাস উভয়েই প্রকাশ্যে বলেছেন, রাশিয়াকে আমাদের হারাতে হবে, রাশিয়াকে তার হাঁটুতে নামতে বাধ্য করা উচিত। যাও, তাহলে করো।’
সম্প্রতি রুশ অধিকৃত পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে দুই ব্রিটিশ যোদ্ধার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে ওই দুই ব্রিটিশ নাগরিকের ভাগ্যের জন্য রাশিয়াই দায়ী। এর জবাবে ল্যাভরভ বলেন, ‘আমি পশ্চিমাদের চোখ দিয়ে দেখতে মোটেও আগ্রহী নই। আমি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়ে আগ্রহী। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আইন, ভাড়াটেরা যোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃত নয়।’
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তিরা ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করত এবং ভাড়াটে যোদ্ধা ছিল না, এমন তথ্য সামনে আনা হলে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটির ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে।
এসময় পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের সাথে কী ঘটছে তার সত্যতা উন্মোচন না করার জন্য বিবিসিকে অভিযুক্ত করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পূর্ব ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গত আট বছর ধরে বোমাবর্ষণ করে আসছে কিয়েভের সেনারা।’
টিএম