ইউক্রেনে আটকে থাকা শস্য ছাড়ে সহায়তায় রাজি রাশিয়া
ইউক্রেন যদি তার সমুদ্রবন্দরগুলো মাইনমুক্ত করে, সেক্ষেত্রে সেসব বন্দরে খাদ্যশস্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে কোনো বাধা দেবে না রাশিয়া। জাতিসংঘের রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বুধবার এ বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক উপলক্ষে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ছিলেন ভাসিলি নেবেনজিয়া। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জাতিসংঘের রুশ দূত বলেন, ‘বন্দর সংলগ্ন সমুদ্রপথে মাইন থাকার কারণে ইউক্রেনে বাণিজ্যিক কোনো জাহাজ প্রবেশ করতে পারছে না। এই মাইন কিন্তু পেতেছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী, আমরা নই।’
বিজ্ঞাপন
‘এ কারণে বন্দরগুলোকে মাইনমুক্ত করার দায়িত্বও ইউক্রেনের, আমাদের নয়; আমরা কেবল এই প্রতিশ্রুতি দিতে পারি— ইউক্রেন যদি তার সমুদ্রবন্দরগুলো মাইনমুক্ত করে, সেক্ষেত্রে (সেসব বন্দরে) শস্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে রুশ বাহিনী কোনো বাধা দেবে না; বরং রাশিয়ার পক্ষ থেকে এসব শস্যবাহী জাহাজকে বন্দর এলাকায় পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’
গত ৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) উপপরিচালক জোসেফ স্মিদুবের জানান, যুদ্ধাবস্থা, তার ফলে সৃষ্ট অবকাঠামোগত বিপর্যয় এবং মারিউপোলসহ একাধিক বন্দরে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় ইউক্রেনের গুদামগুলোতে আটকে আছে প্রায় আড়াই কোটি টন গম ও ভুট্টা।
ইউক্রেনে পরবর্তী ফসল কাটার মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে আগামী জুলাই- আগস্ট মাসে। যদি তার আগে এসব খাদ্যশস্য গুদামমুক্ত না করা যায়, সেক্ষেত্রে দেশটির কৃষকরা নতুন ফসল নিয়ে ব্যাপক বিপাকে পড়বেন বলে জানান জোসেফ স্মিদুবের।
বিশ্বের মোট খাদ্যশস্যের ৩০ শতাংশ যোগান আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে দু’টি দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় কৃষ্ণ সাগর তীরের এ দু’টি দেশে থেকে গম ও ভুট্টা জাতীয় শস্যের যোগান আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
তার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে বাড়ছে গম ও ভুট্টার দাম। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিল— এক মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
ইউক্রেনের তিন সমুদ্রবন্দর খেরসন, মারিউপোল এবং ওডেসার মধ্যে খেরসন ও মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণ ইতোমধ্যে চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে। একমাত্র ওডেসা বন্দরটিই এখন পর্যন্ত দখলে রয়েছে ইউক্রেনের।
তবে মারিউপোল ছাড়া বাকি দু’টি বন্দর সংলগ্ন সমুদ্রপথে মাইন থাকার কারণে যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় চারমাস যাবত জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়েরই মিত্র ও কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী অপর দেশ তুরস্ক অবশ্য বলেছে, বন্দরগুলোকে মাইনমুক্ত করতে কিছু সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে জাহাজ চলাচলের জন্য বিকল্প একটি প্রস্তাব দিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কাভুসোগলু বলেন, ‘বন্দর সংলগ্ন সমুদ্রপথ মাইনমুক্ত করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন পড়বে। আপাতত সমু্দ্রপথের কোন কোন স্থানে মাইন পাতা আছে— সেই তথ্য যদি ইউক্রেন সরকার প্রদান করে, তাহলে সেসব এলাকা এড়িয়ে সহজেই জাহাজ চলাচল করতে পারে দেশটির বিভিন্ন বন্দরে।’
‘আর এর মধ্যে বন্দরগুলোও মাইনমুক্ত করার জন্য সময় পাওয়া যাবে।’
তবে বন্দরগুলো মাইনমুক্ত করার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছে ইউক্রেনের ক্ষমতাসীন সরকার। কিয়েভের আশঙ্কা, বন্দর মাইনমুক্ত করা হলে রাশিয়ার হামলা আরও তীব্র হবে।
ইউক্রেনের সরকারের অন্যতম মুখপাত্র ডেভিড আর্খামিয়া রয়টার্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী বন্দর মাইনমুক্ত করার বিরোধী। তাই এই মূহূর্তে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের আশা খুবই খুবই ক্ষীণ।’
এসএমডব্লিউ