অসুস্থ পোষ্যপ্রাণীর চিকিৎসার অজুহাতে ডেকে সরাসরি বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এক পশু চিকিৎসককে। মূলত চিকিৎসার অজুহাতে বাড়িতে ডাকার পর তাকে অপহরণ করা হয় এবং জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য জবরদস্তিমূলক এই বিয়ের বিরুদ্ধে থানায় ইতোমধ্যেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে। বুধবার (১৫ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই এবং সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

বার্তাসংস্থা এএনআই সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থ পশুর চিকিৎসার অজুহাতে ডেকে চিকিৎসককে জোর করে বিয়ে দেওয়ার এই ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের বেগুসরাইয়ে। প্রথমে পশু চিকিৎসককে ফোন করে বাড়ির পোষ্যপ্রাণীর অসুস্থতার কথা জানানো হয়। দ্রুত ওই প্রাণীর চিকিৎসার প্রয়োজন বলেও ফোনে জানানো হয়। 

এমন ফোন পেয়ে দ্বিতীয়বার ভাবেননি ভুক্তভোগী ওই পশু চিকিৎসক। সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলেন তিন জন। চিকিৎসার উদ্দেশে হাজির হওয়ার পর পশু চিকিৎসককে অপহরণ করে তারা। এরপর জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয় বিয়ের পিঁড়িতে।

অপহরণ ও জোর করে বিয়ে করিয়ে দেওয়ার কথা জানতে পেরে সোজা পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই পশুচিকিৎসকের বাবা। ইতোমধ্যেই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। স্থানীয় থানার পুলিশ কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

বেগুসরাইয়ের এসপি যোগেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানিয়েছেন, ছেলেটির বাবা (পশু চিকিৎসক) থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা এসএইচও এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভুক্তভোগী ওই পশু চিকিৎসকের এক আত্মীয় বার্তাসংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, ‘ঘটনার দিন দুপুর ১২ টার দিকে অসুস্থ একটি প্রাণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য তাকে ডাকা হয়। পরে ৩ জন তাকে অপহরণ করে। বাড়ির সবাই তাকে নিয়ে চিন্তিত ছিল। যার কারণে পরে আমরা পুলিশের কাছে যাই।’

দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, জোর করে বা জবরদস্তিমূলক বিয়ের সংস্কৃতি বিহারে নতুন কিছু নয়। সিনেমা, সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজেও বিষয়টি একাধিকবার উঠে এসেছে। এমন ক্ষেত্রে প্রথমে পাত্র বা পাত্রীকে টার্গেট করা হয়। এরপর তাকে অপহরণ করে সোজা বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়।

বিহারে একসময় এমন বলপূর্বক বিয়ের ঘটনা প্রচুর ঘটতো। পরে এর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির বিধান প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু এরপরও বিহারের অবস্থার উন্নতি যে হয়নি তার প্রমাণ সাম্প্রতিক এই ঘটনা।

এনডিটিভি বলছে, কয়েক বছর আগে বিহারের এক প্রকৌশলীকে নিয়ে একই রকম একটি ঘটনা জাতীয় গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল। সেসময় রাজ্যটির বোকারো স্টিল প্ল্যান্টের জুনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ২৯ বছর বয়সী বিনোদ কুমার। তাকে মারধর করে পাটনার পান্ডারাক এলাকায় এক নারীকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়।

সেসময় জোরপূর্বক এই বিয়ের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। ভিডিওতে বিনোদ কুমারকে বরের পোশাক পরে থাকা অবস্থায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ করতে আকুতি করতে দেখা যায়। এ ঘটনায় সেসময় ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে।

টিএম