মহানবীকে কটূক্তি: ভয়ে দিল্লি ছাড়ল নবীন জিন্দালের পরিবার
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দল থেকে বহিষ্কৃত ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জ্যেষ্ঠ নেতা নবীন কুমার জিন্দালের পরিবার দেশটির রাজধানী দিল্লি ছেড়ে চলে গেছে। মূলত বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে খুনের হুমকি পাওয়ার কারণে আতঙ্কে দিল্লি ছেড়েছেন তারা।
অবশ্য পরিবার অজ্ঞাত স্থানে চলে গেলেও নবীন কুমার দিল্লিতেই অবস্থান করছেন। শনিবার (১১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ড।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের কারণে বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা নবীন কুমার জিন্দালের বিরুদ্ধে মহরাষ্ট্রের পুনেতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত এই নেতা বিজেপির দিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান ছিলেন এবং মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে অশান্তি। নুপুর শর্মার ওই মন্তব্যকে সমর্থন করে টুইট করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নবীন জিন্দাল। আর তাই নুপুরের মতোই তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি।
এই পরিস্থিতিতে নবীন কুমার জিন্দালের অভিযোগ, তাকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তাকে অনুসরণ করছে কিছু মানুষ। আর এ কারণেই আতঙ্কে দিল্লি ছেড়ে চলে গেছে তার পরিবার।
অভিযোগ রয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে নবীন জিন্দালকে। বিজেপির দিল্লি শাখার সাবেক এই গণমাধ্যম প্রধান জানিয়েছেন, ‘আমি এখনও দিল্লিতেই অবস্থান করছি। যদিও আতঙ্কিত হয়ে আমার পরিবার ইতোমধ্যেই শহর ছেড়ে চলে গেছে।’
নবীন জিন্দালের দাবি, গত কয়েক দিন তিনি যেখানেই গেছেন, বুঝতে পেরেছেন বেশ কয়েকজন অচেনা মানুষ তাকে অনুসরণ করছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ডেকান হেরাল্ড বলছে, পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। কারণ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা নবীন জিন্দালের বাড়ির পাশে অবস্থান ও ঘোরাঘুরি করছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়িয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে এনডিটিভি জানিয়েছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে পোস্টের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে বহিষ্কৃত দিল্লি বিজেপির মিডিয়া প্রধান নবীন কুমার জিন্দালের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে পুলিশ।
পুনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দা জাকির ইলিয়াস শেখের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে শহরের কোন্ধওয়া থানায় নবীন কুমার জিন্দালের বিরুদ্ধে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১ জুন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত টুইট করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন নবীন জিন্দাল। আর অভিযোগের ভিত্তিতেই নবীন কুমার জিন্দালের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
এনডিটিভি জানিয়েছে, দায়েরকৃত মামলায় নবীন কুমার জিন্দালের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ধারা ১৫৩-এ (দাঙ্গা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে উস্কানি দেওয়া), ১৫৩-বি (জাতীয় সংহতির পক্ষে ক্ষতিকারক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ), ২৯৫-এ (যেকোনো শ্রেণীর ধর্মীয় অনুভূতিকে ক্ষুব্ধ করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষপূর্ণ কাজ) করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসের অবমাননা করায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৮ (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার ইচ্ছাকৃত অভিপ্রায়ে শব্দ উচ্চারণ করা ইত্যাদি) এবং ৫০৫-দুই (জনসাধারণের উদ্দেশে উস্কানিমূলক বিবৃতির) অভিযোগও আনা হয়েছে জিন্দালের বিরুদ্ধে।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের দুই সপ্তাহ পর ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বরখাস্তকৃত মুখপাত্র নুপুর শর্মার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সমাজের শান্তি বিনষ্ট, অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর দায়ে বিজেপির এই নেতা ছাড়াও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে দিল্লি পুলিশ এই মামলা দায়ের করে।
উল্লেখ্য, ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা এক টেলিভিশন শোতে অংশ নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত ওই মন্তব্য করেছিলেন। পরে দলটির নয়াদিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন জিন্দালও নুপুর শর্মার মন্তব্যের সমর্থনে টুইট করেন।
তাদের এই মন্তব্য দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এমনকি অভিযুক্তদের মন্তব্যের জেরে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মুসলিমরা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। আর এর রেশ ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
অবশ্য এরপরই অনেকটা নড়েচড়ে বসে বিজেপি। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজেপি গত রোববার অভিযুক্ত নুপুর শর্মাকে বরখাস্ত এবং জিন্দালকে বহিষ্কার করা করে। এমনকি পরে বিজেপির এই দুই নেতা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।
টিএম