বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা নুপুর শর্মার গ্রেপ্তারের দাবিতে কলকাতায় বিক্ষোভ। বুধবারের ছবি

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতার অবমাননাকর মন্তব্যের জবাবে দেশটিতে হামলার হুমকি দিয়েছিল আল-কায়েদা। গোষ্ঠীটির এই হুমকির পর এবার ভারতজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে দেশটির মোদি সরকার।

মূলত ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ দেশটির চার রাজ্যে আত্মঘাতী হামলার হুমকি দিয়েছিল জঙ্গি সংগঠনটি। বুধবার (৮ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে হামলা চালানোর হুমকির বিষয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়েদার শাখা (একিউআইএস)-এর একটি চিঠি গত ৬ জুন দেশটির বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। মূলত ওই চিঠিতেই ভারতীয় রাজ্যগুলোতে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর হুমকি দেওয়া হয়।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জঙ্গিগোষ্ঠী একিউআইএস’র হামলার হুমকির সত্যতা যাচাই করে দেখছে। এছাড়া নয়াদিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা রাজ্য পুলিশকে জনসমাগম বা বিক্ষোভের অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কারণ এসব জনসমাগম ও বিক্ষোভ জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।’

ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা এক টেলিভিশন শোতে অংশ নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত ওই মন্তব্য করেছিলেন। পরে দলটির নয়াদিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন জিন্দালও নুপুর শর্মার মন্তব্যের সমর্থনে টুইট করেন।

তাদের এই মন্তব্য দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এমনকি অভিযুক্তদের মন্তব্যের জেরে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মুসলিমরা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। আর এর রেশ ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

অবশ্য এরপরই অনেকটা নড়েচড়ে বসে বিজেপি। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজেপি গত রোববার অভিযুক্ত নুপুর শর্মাকে বরখাস্ত এবং জিন্দালকে বহিষ্কার করা করে। এমনকি পরে বিজেপির এই দুই নেতা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।

কিন্তু এরপরও বিজেপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মুসলিম বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও তোপের মুখে পড়েছে ভারত। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোসহ এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় দেড় ডজন দেশ ভারতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এসব দেশ ভারত ও বিজেপি সরকারের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশটিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে দলীয় মুখপাত্র এবং নেতাদের টিভি বিতর্কে যোগ দেওয়া-সহ তাদের বক্তব্যের নতুন সীমারেখা নির্ধারণ করেছে প্রতিবেশী এই দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। অর্থাৎ টেলিভিশনে বিতর্কে অংশ নিতে হলে এবার মুখ খুলতে হবে ভেবেচিন্তে।

বিজেপি সূত্র বলছে- এখন থেকে শুধুমাত্র বিজেপির অনুমোদিত মুখপাত্র ও প্যানেলিস্টরা টিভি বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন। আর মুখপাত্র ও প্যানেলিস্টদের টিভি বিতর্কে অংশ নেওয়ার দায়িত্ব বা অনুমোদন দেবে ভারতের ক্ষমতাসীন এই দলটির মিডিয়া সেল।

একইসঙ্গে টিভি বিতর্কে অংশ নিয়ে বা অন্য কোথাও বক্তব্য দেওয়ার সময় কোনো ধর্ম, তার প্রতীক বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের সমালোচনা করার বিরুদ্ধে মুখপাত্রদের সতর্ক করা হয়েছে বলেও এনডিটিভিকে জানিয়েছে বিজেপির ওই সূত্র।

ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, কোনো আলোচনা উত্তপ্ত অবস্থায় গেলেও সেখানে সীমা লঙ্ঘন না করতে বিজেপি প্যানেলিস্টদের নিষেধ করা হয়েছে। নিজেদের ভাষা সংযত রাখতে এবং উত্তেজিত না হওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটির এক সূত্র।

টিএম