জেলেনস্কির দাবি
সিভিয়েরোদোনেতস্কের ‘নৃশংস’ যুদ্ধ ডনবাসের ভাগ্য নির্ধারণ করবে
ইউক্রেনের সিভিয়েরোদোনেতস্ক শহরের যুদ্ধকে নৃশংস উল্লেখ করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, চলমান এই যুদ্ধই পুরো ডনবাস অঞ্চলের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
অন্যদিকে পূর্ব ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ আরও পোক্ত করতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর চালানো আক্রমণে শহরটি অনেকটাই বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক চলা রাশিয়ার সর্বাত্মক এই হামলা গত মাসেই গড়িয়েছে চতুর্থ মাসে।
রাশিয়া অবশ্য তিনমাস ধরে সামরিক অভিযান চালালেও রুশ সেনারা প্রাথমিকভাবে প্রায় পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হামলা পরিচালনা করে। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মূল মনোযোগ দেয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়। মূলত তখন থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ সেনারা।
আরও স্পষ্ট করে বললে, রুশ-ভাষী মানুষকে রক্ষা এবং রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার কথা বলে দোনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডনবাস ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এতেই রুশ সেনাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের এই শিল্প এলাকা।
ক্রেমলিন বলেছে, তারা এখন ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন ডনবাস অঞ্চলকে সম্পূর্ণরূপে ‘মুক্ত’ করতে চাইছে। মূলত সেখানকার রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০১৪ সালে ইউক্রেনের সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যায়। আর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ আগ্রাসন শুরুর আগে ডনবাসের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে ছিল।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার এক ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত নৃশংস একটি যুদ্ধ, খুব কঠিন, সম্ভবত চলমান এই যুদ্ধ জুড়ে সবচেয়ে কঠিন একটি অধ্যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডনবাস নিয়ে যুদ্ধে সিভিয়েরোদোনেতস্ক শহরটি এখনও লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থল হিসেবে রয়ে গেছে... মূলত, সেখানেই এখন আমাদের ডনবাসের ভাগ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে।’
রয়টার্স বলছে, সিভিয়েরোদোনেতস্কে লড়াইরত ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা পিছু হটে বুধবার শহরের উপকণ্ঠে চলে গেছে। কিন্তু যতদিন সম্ভব সেখানে লড়াই করার অঙ্গীকার করেছে তারা। অন্যদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর তীব্র গোলাবর্ষণ ইউক্রেনের লুহানস্ক প্রদেশের এই শহরটিকে বোমা বিধ্বস্ত বর্জ্যভূমিতে পরিণত করেছে।
লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সেরহি গাইদাই বলেছেন, শহরের কেন্দ্রস্থলকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। রাশিয়া এখন লুহানস্ক অঞ্চলের ৯৮ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার গভীর রাতে ইউক্রেনীয় টেলিভিশনকে গাইদাই বলেন, ‘আমাদের যোদ্ধারা সিভিয়েরোদোনেতস্কের শিল্পাঞ্চলে অবস্থান করছে। কিন্তু যুদ্ধ শুধু শিল্পাঞ্চলেই নয়, সিভিয়েরোদোনেতস্ক শহরেও চলছে।’
অবশ্য রুশ আত্রমণের মধ্যেও ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনও সিভারস্কি ডোনেতস নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত সিভিয়েরোদোনেতস্কের ছোট যমজ শহর লিসিচানস্কের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। তবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সেখানকার আবাসিক ভবনগুলো ধ্বংস করছে।
রয়টার্স অবশ্য স্বাধীনভাবে উভয় শহরের প্রকৃত পরিস্থিতি যাচাই করতে পারেনি।
টিএম