নূপুর শর্মা, ছবি: এনডিটিভি

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহম্মদ (সঃ) কে নিয়ে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য ও তার ফলে উত্তর প্রদেশের কানপুরে সৃষ্ট দাঙার ঘটনায় বিজেপির উত্তর প্রদেশ শাখার মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও নাভিন কুমার জিন্দালকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি হাইকমান্ড।

রোববার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। এই বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার আগে রোববার দুপুরের দিকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয় দলটির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে।

সেখানে বলা হয়, ‘ভারতের হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে প্রতিটি ধর্মই প্রস্ফুটিত ও বিকশিত হয়েছে এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো ব্যক্তি যে কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারেন, কিন্তু এ কারণে তাকে হামলা করা বিজেপি কখনও সমর্থন করে না, বরং এ ধরনের আচরণ কঠোরভাবে নিন্দানীয়।’

‘সেই সঙ্গে, কোনো মতাদর্শ যদি কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপমান বা হীন দৃষ্টিভঙ্গি ছড়ায়, তার বিরুদ্ধেও শক্ত অবস্থান নেবে বিজেপি; এবং এ ধরনের ব্যক্তি বা মতাদর্শকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’

‘ভারতের সংবিধানে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে তার পছন্দ অনুযায়ী ধর্মচর্চার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পাশপাশি সব ধর্মের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা পোষণ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংবিধানে।’

‘ভারত তার ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে এবং আমরা ভারতকে একটি মহান দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতকে এমন একটি দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বে পরিচিত করতে চাই যেখানে প্রত্যেক ভারতীয় দেশের ঐক্য ও সমন্বয় রক্ষায় অঙ্গীকারবন্ধ থাকবেন, সবাই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সুফল ভোগ করবেন।’

ভারতের আলোচিত জ্ঞানবাপী মসজিদ ইস্যুতে গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন টকশোতে মহানবী (সঃ) প্রসঙ্গে অবমাননাকর মন্তব্য করেন বিজেপি উত্তর প্রদেশ শাখার অন্যতম মুখপাত্র নূপুর শর্মা। এ ঘটনায় কানপুরের মুসলিমদের মধ্যে বিক্ষোভ তৈরি হয়।

এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে টুইট করেন উত্তর প্রদেশ বিজেপির অপর নেতা নাভিন কুমার জিন্দাল। পরে অবশ্য সেই টুইট মুছে ফেলেছেন তিনি।

এদিকে, এ ঘটনার জেরে কানপুরের একপক্ষ স্থানীয় বাজার বন্ধ করার আহ্বান জানালে অপরপক্ষ পাল্টা অবস্থান নেয়। শুক্রবার জুমার নামাজের পর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষের সদস্যরা।

সংঘর্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘাত ও পাথর নিক্ষেপের ফলে পুলিশের ২০ কর্মকর্তাসহ উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে এনডিটিভিকে জানিয়েছেন কানপুরের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

কানপুর পুলিশ কমিশনার বিজয় সিং মীনা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে সংঘাতের উস্কানি ছড়ানো হয়েছিল। ভারতের কট্টরপন্থী ইসলামি সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএফআই) নেতা জাফর হায়াত হাশমি সাম্প্রতিক এই সংঘাতের  মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন বলেও উল্লেখ করেছেন পুলিশ কমিশনার।

ইতোমধ্যে জাফর হায়াত হাশমিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া উত্তেজনা ছড়ানো ও উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও ২৪ জনকে।

এসএমডব্লিউ