সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, ছবি: রয়টার্স

ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোয় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউস। বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সৌদি বাদশা সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে অভিনন্দন জানান হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জেন পিয়েরে।

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যারিন জেন পিয়েরে বলেন, ‘সহযোগিতামূলক পররাষ্ট্রনীতি ব্যতীত এই যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করা সম্ভব হতো না; এবং এজন্য আমরা বিশেষভাবে কৃতিত্ব দেবো বাদশা সালমান ও সৌদি যুবরাজকে। মূলত এ দু’জনের উদ্যোগের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।’

তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, চলতি জুনের সৌদি আরব সফরের কথা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। সেজন্য দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতেই সৌদি যুবরাজের এই ‘বিরল’ প্রশসংসা করেছে হোয়াইট হাউস।

কারণ, যুদ্ধবিরতির এ মেয়াদবৃদ্ধিতে সৌদি নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও আগের দিন বুধবার এক  হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ২০১৮ সালে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশুগজিকে হত্যা ও তার লাশ গুমের ঘটনায় এমবিএসের ভূমিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা সংস্থার ভাষ্যের কারণে বাইডেন সৌদি যুবরাজকে এখনও ‘ব্রাত্য’মনে করেন।

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের দমনে ২০১৬ সালে দেশটিতে অভিযান শুরু করে সৌদি-আমিরাত সামরিক জোট। যুদ্ধের প্রায় ৬ বছর পর চলতি বছর ২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দুই মাসের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় হুথি ও সৌদি-আমিরাত সামরিক জোট।

বৃহস্পতিবার ছিল সেই যুদ্ধ বিরতির শেষ দিন। তবে এই শেষ দিনেই বিবদমান দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতি আরও দুই মাস বর্ধিত করতে সম্মত হয়েছে বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ইয়েমেন বিষয়ক বিশেষ দূত হ্যান্স গ্র্যান্ডবার্গ।

এদিকে, সৌদি আরবের ডি-ফ্যাক্টো নেতা মোহাম্মদ বিন সালমানের ওপর শুরু থেকে অসন্তুষ্ট ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সরাসরি না হলেও আকারে ইঙ্গিতে বিভিন্ন সময়ে এই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।

সৌদি যুবরাজের ওপর বাইডেনের অসন্তোষের মূল কারণ ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ও সৌদি রাজপরিবারের সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড। ২০১৮ সালে তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে জামাল খাসোগিকে হত্যা করে তার মরদেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অভিযোগ করা হয়েছে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সৌদি প্রশাসন যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে, কিন্তু বাইডেন প্রশাসনের সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার ওপরই আস্থা রেখেছেন।

এদিকে, চলতি মাসের শেষদিকে ইউরোপ ও ইসরায়েল সফরের সময় বাইডেন সৌদি আরব সফরে পরিকল্পনা করছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন বাইডেন প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা।

সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে এমন এক সময়ে এ সফর হচ্ছে, যখন বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানির দাম কমানোর উপায় খোঁজার চেষ্টা করছেন।

এসএমডব্লিউ