ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের মধ্যকার ‘যোগসাজশে’ উদ্বেগ বোধ করছে চীন। এ কারণে সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষায় তাইওয়ানের চারপাশে টহল দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে চীনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)।

মঙ্গলবার পিপলস লিবারেশন আর্মির পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা মুখে বলছে এক কথা, কাজ করছে অন্যরকম; পাশাপাশি তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তারা সহায়তা ও উসকানি দিয়ে যাচ্ছে—যা অদূর ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে পরিচালিত করবে।’

‘তাইওয়ান চীনের অংশ এবং চীন তার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। বিদেশি শক্তির অনধিকার প্রবেশ ঠেকাতে তাই তাইওয়ানের চার পাশে সম্প্রতি সামরিক টহল শুরু করা হয়েছে।’

ঠিক কবে থেকে এই টহল শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে বিবৃতিতে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি পিএলএ। তবে এই বিবৃতির মাধ্যমে সোমবার তাইওয়ানের আকাশসীমায় চীনা বিমান প্রবেশের কারণ স্পষ্ট করল চীনের সেনাবাহিনী।

তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এআইডিজেড) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার তাইওয়ানের আকাশসীমায় ৩০ টি চীনা যুদ্ধ বিমান প্রবেশ করেছিল। এই ঘটনাকে চলতি বছরের হিসেবে নিজেদের আকাশসীমায় ‘সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ’ বলে দাবি করেছে এআইডিজিজেড।

তবে নিজেদের আকাশসীমায় চীনা বিমানের উপস্থিতি আঁচ করতে পারা মাত্র তাইওয়ান বিমানবাহিনীর ২২ টি বোমারু বিমান তাড়া করা শুরু করে অনুপ্রবেশকারী বিমানগুলোকে এবং একসময় চীনা যুদ্ধবিমানগুলো পিছু হটতে বাধ্য হয় বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে স্বায়ত্ত্বশাসিত এ দ্বীপ ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চীনের যুদ্ধ বিমান পারাতাস দ্বীপের আকাশসীমায় প্রবেশ করলেও তাইওয়ানের আকাশসীমা অতিক্রম করার কোনো প্রবণতা সেসবের মধ্যে দেখা যায়নি। যদি এমন হতো, তাহলে সেটি চরম বৈরী আচরণ হিসেবে গণ্য করা হতো।

১৯৪০ সালের গৃহযুদ্ধে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তাইওয়ান। তারপর থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতিকরা নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে দাবি করলেও চীন এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে এখনও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।

৩৬ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ভূখণ্ডের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব এবং প্রায় ৩ লাখ সক্রিয় সেনা সদস্যের একটি সেনাবাহিনী।

এখন পর্যন্ত অবশ্য খুবই অল্প কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকলেও তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনো দূতাবাস খোলেনি দেশটি।

তবে তাইওয়ান বিষয়ক একটি আইনের আওতায় এই স্বাধীনতাকামী দ্বীপভূখণ্ডকে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত সপ্তাহে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোট কোয়াডের বৈঠকে যোগ দিতে জাপান গিয়েছিলেন জো বাইডেন। সেখানে তাইওয়ানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ নিয়ে চীনকে সতর্কবার্তা দেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে বলেন, ‘তাইওয়ানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের মাধ্যমে চীন আসলে বিপদকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।’

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ