আফগানিস্তানে আবারও ভারতীয় দূতাবাস চালুর আহ্বান জানিয়েছেন তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। 

মুত্তাকি বলেন, ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক উন্নতির দিকে যাচ্ছে এবং নয়াদিল্লির উচিত কাবুলে নিজের দূতাবাস পুনরায় চালু করা। 

তিনি বলেন, তালেবান সরকার কাবুলে অন্যান্য দেশের দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর মতো ভারতীয় কূটনীতিকদেরও নিরাপত্তা রক্ষার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। অপর কোনো দেশের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করার অনুমতি দেবে না তালেবান সরকার।  
 
ভারতের নিউজ চ্যানেল ‘সিএনএন নিউজ ১৮’ এর প্রতিবেদনের সূত্র দিয়ে একটি প্রতিবেদনে এসব জানিয়েছে পার্স টুডে। 

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতন হওয়ার পর বিশ্বের বহু দেশের মতো ভারত সরকারও কাবুলে নিজের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ, কান্দাহার, হেরাত ও জালালাবাদে নিজের কনস্যুলেটগুলোও বন্ধ করে দেয় নয়া দিল্লি। 

বিশ্বের কোনো দেশ এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না দিলেও বহু দেশ তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক লেনদেন রক্ষা করে যাচ্ছে। এমনকি কাবুলে বহু দেশের দূতাবাসও চালু রয়েছে। 

দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কাবুলে যখনই যে সরকার ক্ষমতায় আসুক তার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে নয়াদিল্লি।   

ভারতের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য আফগানিস্তানের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করা হয়।  

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানে ক্ষমতা থেকে তালেবান উৎখাত হওয়ার পর যে দেশটি আফগানিস্তানে প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়াতে সবচেয়ে তৎপর হয়েছিল, সেটি ভারত। 

আফগানিস্তানে বিভিন্ন প্রকল্পে ভারত ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে

আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারে গত দুই দশকে চারশোরও বেশি সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং বড় বড় কিছু অবকাঠামো প্রকল্পে ৩০০ কোটি ডলারেও বেশি বিনিয়োগ করেছে ভারত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ডজন ডজন প্রকল্প ছাড়াও, দিলারাম-জারাঞ্জ মহাসড়ক নামে ২১৮ কিমি দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক তৈরি করে দিয়েছে ভারত। কাবুলে নতুন আফগান পার্লামেন্ট ভবনটিও তৈরি করেছে তারা। 

২০২১ সালে তালেবান যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করছিল তখন বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দিল্লির জওহারলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় ভরদোয়াজ বলেছিলেন, বৃহত্তর আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অভিলাষ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য ভারতের জন্য আফগানিস্তান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ।  

মধ্য এশিয়ার বাজারে ঢোকার জন্য ভারতের জন্য আফগানিস্তান খুবই জরুরি। আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে ইরান ও মধ্য এশিয়ার সাথে দুটো পাইপলাইন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের।  

এসব ক্ষেত্রে পাকিস্তান ইস্যুকেও সামনে এনেছিলেন সঞ্জয় ভরদোয়াজ। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান যদি আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি এবং নিরাপত্তা নীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, তা হবে ভারতের জন্য দুঃস্বপ্ন। 

গত বছরের জুনে তালেবানের সঙ্গে ভারত গোপন আলোচনায় বলে বলেও খবর রয়েছে।  আর তালেবানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আগস্টে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভারত বৈঠক করে। ওই বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতবিরোধী জঙ্গিরা যেন আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে ভারতীয় স্বার্থে আঘাত করতে না পারে ভারতের এমন আশঙ্কার কথা তালেবান নেতৃত্বের কাছে জানানো হয়।  

এনএফ