বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রিপুরায় জ্বালানি পরিবহন করতে চায় ভারত
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে আসাম থেকে ত্রিপুরায় জ্বালানি পরিবহনের পরিকল্পনা করছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনকারী কোম্পানি ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি)। সাম্প্রতিক বন্যায় আসামে ব্যাপক ভূমিধসের কারণে রেল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প পথ হিসেবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারের এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি।
রোববার আইওসির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে আসামের ডিমা হাসাও জেলা ও বরাক উপত্যকা, মিজোরাম, মণিপুর এবং ত্রিপুরার সাথে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগকারী একমাত্র রেলপথটি বন্যায় ভেসে যাওয়ায় আইওসি মেঘালয়ের মাধ্যমে সড়কপথে তাদের সব সরবরাহ শুরু করেছে। এতে কোম্পানির পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে আইওসির নির্বাহী পরিচালক (ইন্ডিয়ান ওয়েল-এওডি) জি রমেশ বলেছেন, ডিমা হাসাওয়ে ভূমিধসের পর মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং আসামের দক্ষিণাঞ্চলে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় সড়কপথ। এই রুটও ভূমিধসপ্রবণ।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে উত্তরপূর্ব ভারতের দক্ষিণের এলাকাগুলোতে জ্বালানি সরবরাহের জন্য সরকার এবং কেন্দ্র বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য হয়েছে। রমেশ বলেছেন, কোম্পানির উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা ইন্ডিয়ানঅয়েল-এওডি ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ত্রিপুরায় কয়েকটি চালান পাঠিয়েছিল। সেই সময় আসামের বরাক উপত্যকায় রাস্তার করুণ অবস্থার কারণে সরবরাহে ভয়াবহ ব্যাঘাত ঘটেছিল।
আইওসির এই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা বিকল্প রুট হিসেবে ছয় বছরের পুরোনো নেটওয়ার্কটি পুনরায় সচল করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমরা কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনা করছি। আমরা আশাবাদী, শিগগিরই ইতিবাচক খবর আসবে।’
ভারতের সরকারি এই কোম্পানি মেঘালয়ের ডাউকি হয়ে বাংলাদেশে জ্বালানি কনভয় পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। পরে সেই কনভয়
বাংলাদেশ থেকে পুনরায় ভারতের ত্রিপুরার কৈলাশহরে প্রবেশ করবে।
এই বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত এবং একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ইন্ডিয়ানঅয়েল-এওডি তাদের জ্বালানি প্রাথমিকভাবে গুয়াহাটির বেতকুচি ডিপো থেকে বাংলাদেশের মাধ্যমে ত্রিপুরার ধর্মনগর ডিপোতে পরিবহন করবে। রমেশ বলেছেন, প্রথম ধাপে একটি পূর্ণ কনভয় পাঠানো সম্ভব নাও হতে পারে। আমরা পেট্রোল, ডিজেল এবং এলপিজি বহনকারী একটি পাইলট কনভয় পাঠাতে চাই। আর এই পাইলট চালান কেবল ৮০ থেকে ১২০ কিলোলিটার জ্বালানি পরিবহন করতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইওসির আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পিটিআইকে বলেছেন, আইওসি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে রেলপথে এক হাজার ৪০০ কিলোলিটার জ্বালানি ৩৪ দশমিক ২২ লাখ রুপির বিপরীতে ৫৭ দশমিক ৭৮ লাখ রুপিতে পরিবহনের পরিকল্পনা করছে।
বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি আইওসির বেতকুচি ডিপো থেকে ধর্মনগর ডিপোতে পরিবহনের মোট দূরত্ব হবে ৩৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশের ভেতরে পড়বে ১৩৭ কিলোমিটার। কিন্তু এই সড়কপথের মেঘালয়-বরাক উপত্যকা হয়ে ধর্মনগর ডিপো পর্যন্ত স্বাভাবিক দূরত্ব ৫৭৯ কিলোমিটার।
২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের এই কোম্পানি আসামের জরাজীর্ণ জাতীয় মহাসড়ক এড়াতে প্রথমবারের মতো গুয়াহাটি ডিপো থেকে ৮৪ হাজার লিটার কেরোসিন এবং ডিজেল বহনকারী সাতটি ট্যাঙ্কারকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরায় পাঠিয়েছিল। রেল সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আইওসির সব জ্বালানি মেঘালয় হয়ে সড়কপথে সরবরাহ করা হয়। ইন্ডিয়ানঅয়েল-এওডির এক মুখপাত্র বলেছেন, এর ফলে কোম্পানির ব্যয় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইন্ডিয়ানঅয়েল-এওডির ব্যবস্থাপক (কর্পোরেট কমিউনিকেশন) শেখর জ্যোতি দত্ত বলেছেন, রেলপথে বরাক উপত্যকা, মিজোরাম এবং ত্রিপুরায় জ্বালানি পরিবহনের মাসিক ব্যয় ছিল ৪ দশমিক ৭১ কোটি রুপি। কিন্তু বর্তমানে সড়কপথে জ্বালানি সরবরাহ করায় আমাদের ব্যয় বেড়ে মাসে ১০ দশমিক ৫৬ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি।
এসএস