ভারতের মধ্য প্রদেশে মানসিকভাবে অসুস্থ এক ব্যক্তিকে অপর এক ব্যক্তির উপর্যুপরি চড়-থাপ্পড় মারার পর ওই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যে ব্যক্তি মারধর করছেন তিনি অসুস্থ ওই ব্যক্তির দুই গালে থাপ্পড় মারার পাশাপাশি তার নাম ‌‘মোহাম্মদ’ কিনা তা বারবার জানতে চান। অসুস্থ ব্যক্তির নাম বলার চেষ্টার মাঝেই তাকে অনবরত থাপ্পড় মারা হয়।

এ ঘটনায় মধ্য প্রদেশের নিমুচ থানায় শনিবার মামলা দায়ের হয়েছে। হামলাকারীর নাম দীনেশ কুশওয়াহা এবং মামলায় তাকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কুশওয়াহা রাজ্যের বিজেপির সাবেক এক করপোরেটরের স্বামী।

পুলিশ বলছে, মানসিক অসুস্থ বয়স্ক ওই ব্যক্তির নাম ভানওয়ারলাল জৈন। প্রদেশের রাতলাম জেলার সার্সির বাসিন্দা তিনি। রাজস্থানে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর গত ১৫ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা থানায় নিখোঁজের অভিযোগ করার পর পুলিশ তার ছবিসহ সতর্কতা জারি করে। শুক্রবার নিমুচ জেলার একটি রাস্তার পাশ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে পরিবারের সদস্যদের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন: ভারতের বহুল আলোচিত সেই ধর্ষণকাণ্ডে ৯ বাংলাদেশির কারাদণ্ড

এরপরই পরিবারের সদস্যরা ভিডিওটির ব্যাপারে জানতে পারে। ভিডিওতে দেখা যায়, জৈন একটি বেঞ্চের ওপর বসে আছেন এবং কুশওয়াহা তার সামনে দাঁড়িয়ে দুই গালে উপর্যুপরি থাপ্পড় মারছেন। এ সময় তিনি জিজ্ঞাসা করেন, আপনার নাম কী? মোহাম্মদ? এসব প্রশ্নের সঙ্গে জৈনর মুখে অবিরাম থাপ্পড় চলে কুশওয়াহার। ভিডিওতে তাকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ‘আপনার নাম ঠিকভাবে বলুন, আধার কার্ড দেখান।’

এসব প্রশ্ন আর থাপ্পড়ের মাঝে বৃদ্ধ ওই ব্যক্তিকে ক্ষুব্ধ দেখা যায় এবং তিনি কুশওয়াহারকে টাকা দেন। এতে হামলাকারী আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং দেশটির প্রবীণ এই নাগরিকের মাথা ও কানে অবিরাম থাপ্পড় মারেন। ৬৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি যে পরিস্থিতিতে পড়েছেন তা বুঝতে রীতিমতো লড়াই করছেন বলে ভিডিওতে দেখা যায়। তিনি শার্টের একটি গোপন পকেট থেকে টাকা বের করে তা হামলাকারীকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। টাকার প্রস্তাব দেওয়ায় তাকে আরও বেশি চড় মারতে থাকেন কুশওয়াহার।

রোমহর্ষক এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর জৈনর পরিবারের সদস্যরা পুলিশ স্টেশনে যান এবং তারা কুশওয়াহারকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএল ডাঙ্গি বলেন, ভিডিওটি সম্ভবত গত বৃহস্পতিবারের।

রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র বলেছেন, এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির অবহেলাজনিত কারণে হত্যা ও মৃত্যুর ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর বিরোধীরা ক্ষমতাসীন বিজেপির কড়া সমালোচনা করেছেন।

কংগ্রেসের বিধায়ক জিতু পাটওয়ারি বিজেপির বিরুদ্ধে ‌‘ঘৃণার চুল্লি জ্বালানোর’ অভিযোগ করেছেন। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা দিগ্বিজয় সিং বলেছেন, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা তা দেখার বাকি।

সূত্র: এনডিটিভি।

এসএস