ছবি: রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড

ভাইরাসজনিত বিরল রোগ মাঙ্কিপক্সের সংক্রমন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ইউরোপে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতোমধ্যে শুক্রবার ডব্লিউএইচওর ইউরোপীয় শাখা জরুরি বৈঠকও করেছে।

চলমান সংক্রমণ পরিস্থিতিকে ইউরোপে মাঙ্কিপক্সের সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব বলে উল্লেখ করেছে জার্মানি। রয়টার্সের প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন ও যুক্তরাজ্য— ৯ ইউরোপীয় দেশে শনাক্ত হয়েছে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী। স্পেনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি— ২৪ জন।

এছাড়া, ইসরায়েলেও সম্প্রতি একজন রোগী মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি পশ্চিম ইউরোপ থেকে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছিলেন।

মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ও স্বল্প পরিচিত রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার উষ্ণ ও আদ্র বনাঞ্চলের বানররা ছিল এ রোগের প্রথম শিকার।তার পর একসময় মানবদেহেও সংক্রমিত হওয়া শুরু করে রোগটি।

মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাসজনিত অসুখ। স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণীর একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটির দু’টি রূপান্তরিত ধরন রয়েছে— মধ্য আফ্রিকান ও পশ্চিম আফ্রিকান।

রোগটির বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। প্রথম পর্যায়ে রোগীর জ্বর আসে, পাশাপশি শরীরে দেখা দেয় ফোস্কা ও অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলা।

সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের মতো মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। গণ সংক্রমণের ঝুঁকিও খুব কম। এতদিন কেবল মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকাতেই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলত।

এ কারণে এই ভাইরাসটি করোনা মহামারির মতো দুর্যোগ বয়ে আনবে না বলেই ধারণা করছেন সংক্রামক রোগ ও জীবাণু বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা, তবে ডব্লিউএইচও এতটা নিশ্চিত হতে পারছে না।

সংস্থার ইউরোপীয় শাখার এক কর্মকর্তা এ সম্পর্কে রয়টার্সকে বলেন, ‘এ মহাদেশের দেশগুলোতে পুরো গ্রীষ্মকালজুড়ে পার্টি ও উৎসব চলতে থাকে। এ কারণে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

মাঙ্কিপক্স রোগের জন্য এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তবে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, স্মলপক্স বা জলবসন্তের জন্য ব্যবহৃত টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর।

সংক্রমণ সম্পর্কিত আরও কিছু তথ্য

১৯৭০ সালের পর থেকে আফ্রিকার ১১ দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের পর নাইজেরিয়ায় এবার সবচেয়ে বেশি এ রোগের প্রকোপ দেখা গেছে। এবছর এখনও পর্যন্ত ৪৬ জনের দেহে উপসর্গ দেখা গেলেও ১৫ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

গত ৭ মে প্রথম একজন ইউরোপীয়ের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়া থেকে ওই ব্যক্তি ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলেন। এরপর থেকে আফ্রিকার বাইরে ১০০ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে ইউনিভার্সিট অব অক্সফোর্ড একাডেমিক।

রয়টার্স লিখেছে, শনাক্তদের বেশিরভাগেই আফ্রিকা ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত নন। যে কারণে রোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, সামাজিক সংস্পর্শ থেকে এটা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যৌনতায় ছড়ায় মাঙ্কিপক্স?

যুক্তরাজ্যে এখন ২০ জন শনাক্ত রোগী রয়েছে। ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি জানিয়েছে, সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই পুরুষ যারা নিজেদের সমকামী, উভকামী কিংবা কোনা পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গের কথা জানিয়েছেন।

পর্তুগালে সংক্রমিত ১৪ জনই শনাক্ত হয়েছেন বিভিন্ন যৌন চিকিৎসা কেন্দ্রে। তারাও পুরুষ এবং নিজেদের সমকামী, উভকামী অথবা অপর কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গের কথা জানিয়েছেন।

স্পেনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার ২৩ জনের দেহে নতুন করে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই মাদ্রিদ এলাকার এবং বেশিরভাগ সংক্রমণের সঙ্গেই প্রাপ্ত বয়স্কদের একটি বাষ্পীয় স্নানাগারের সম্পর্ক রয়েছে।

তবে ইতালির লাজিও অঞ্চলের স্বাস্থ্য কমিশনার আলেসিও ডি’ আমাতো রয়টার্সকে বলেন, ‘এ রোগটি যৌনবাহিত কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। তাই আগেভাগেই এমন ধারণা পোষন করা উচিত হবে না আমাদের।’

ইতালিতে এখন পর্যন্ত তিনজনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। 

লন্ডনের কিংস কলেজের ভাইরাসবিদ স্টুয়ার্ট নেইলও ইতালির আলেসিও ডি’আমাতোর সঙ্গে একমত। রয়টার্সসে তিনি বলেন, ‘সংজ্ঞা অনুযায়ী যৌন সংসর্গকে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শই বোঝায়। তবে আমার মনে হয় মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে যৌনবাহিত সংক্রমণের ধারণা—এটা কিছুটা বাড়িয়ে বলা হয়ে যায়।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জনের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসের জিন বিন্যাস করছেন। দ্রুতই এ বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এসএমডব্লিউ