করোনাভাইরাসে কাবু হয়ে পড়েছে উত্তর কোরিয়া। প্রতিদিনই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন দেশটির বহু মানুষ। প্রথমবারের মতো করোনার সংক্রমণ নিশ্চিত করার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২২ লাখ।

এদিকে পিয়ংইয়ং বলেছে, ধীরে হলেও করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘ভালো ফলাফল’ অর্জন করছে উত্তর কোরিয়া। শুক্রবার (২০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

বিশ্বজুড়ে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা মহামারি চললেও বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়া এতোদিন দাবি করে আসছিল তাদের দেশে কেউ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়নি। তবে গত সপ্তাহেই প্রথমবারের মতো দেশটি করোনা সংক্রমণের তথ্য স্বীকার করে।

এরপরই মূলত পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির জন্য ব্যাপকভাবে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে বাকি বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন এই দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এবং ভ্যাকসিনের অভাব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, গত একদিনে দেশটিতে নতুন করে আরও ২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জনের শরীরে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম লক্ষণ জ্বরের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। একইসময়ের মধ্যে দেশটিতে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও দুই জন।

কেসিএনএ’র তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলের শেষের দিক থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ায় জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২২ লাখ ৪০ হাজার। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬৫ জন।

রয়টার্স বলছে, উত্তর কোরিয়ার কোভিড পরীক্ষার সক্ষমতার অভাব রয়েছে এবং জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ঠিক কতজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে প্রকাশ করেনি দেশটি।

এই পরিস্থিতিতে বাইরের দেশের সহায়তা নেওয়া উত্তর কোরিয়ার জন্য ভালো একটি বিকল্প হতে পারে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও তাতে সাড়া দেয়নি উত্তর কোরিয়া।

অবশ্য করোনা বা এর উপসর্গ জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই ব্যাপকভাবে বাড়লেও দেশের কৃষিকাজ ও কল-কারখানাগুলো সচল রয়েছে বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এছাড়া সংক্রমণের উল্লম্ফনের মধ্যেও দেশটি একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরিকল্পনাও করছে।

সরকারি সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ জানিয়েছে, ‘সর্বাধিক জরুরি মহামারি প্রতিরোধ পরিস্থিতির মধ্যেও প্রধান শিল্পখাতগুলোতে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা হয় এবং বড় আকারের নির্মাণ প্রকল্পগুলোকে বিনা বাধায় চালু রাখা হয়।’

সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ‘চলমান মহামারি বিরোধী যুদ্ধে ধীরে হলেও ভালো ফলাফলের খবর পাওয়া যাচ্ছে।’

এর আগে গত বুধবার কেসিএনএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, উত্তর কোরিয়া আপাতত অতিরিক্ত কোয়ারেন্টাইন সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ, পরিবহন এবং পরীক্ষা আরও ভালোভাবে পরিচালনা করার বিষয়ে জোর দিচ্ছে।

এছাড়া ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা একটি কোভিড-১৯ চিকিৎসা নির্দেশিকা তৈরি করেছেন বলেও জানিয়েছিল উত্তর কোরিয়ার এই সরকারি সংবাদমাধ্যমটি।

টিএম