ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড-সুইডেনের যোগ দেওয়ার আলোচনা আটকে দিলো তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির আলোচনা শুরু করতে দেয়নি তুরস্ক। দেশটি বলেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তুরস্কের নিরাপত্তার প্রতি সম্মান দেখানো না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটো জোটের সদস্য হতে দেওয়া হবে না।
এছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, সুইডেনের আশা করা উচিত নয় যে ‘সন্ত্রাসীদের’ ফিরিয়ে না দিলে তাদের ন্যাটো জোটে যোগদানের বিষয়টি তুরস্ক সমর্থন করবে। একইসঙ্গে সুইডিশ এবং ফিনিশ প্রতিনিধিদের জোটে তাদের সদস্যপদ সমর্থন করার জন্য তুরস্ককে রাজি করাতে আঙ্কারায় আসাও উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে। মূলত ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার বিষয়ে শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে তুরস্ক।
রয়টার্স বলছে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের জন্য আবেদন করে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণেই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এই দেশ দু’টি জোটে অন্তর্ভুক্তির আবেদন করে। অবশ্য তুরস্কের আপত্তি সত্ত্বেও যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তুরস্ক বলছে, জঙ্গিগোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) ও ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারীসহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড। ফেতুল্লাহ গুলেনকে ২০১৬ সালে তুরস্কে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী করে থাকে আঙ্কারা।
বুধবার তুরস্কের পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন একে পার্টির আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের আক্রমণ থেকে আমাদের সীমান্ত রক্ষা করার বিষয়টি আমাদের কাছে খুবই স্পর্শকাতর।’
তিনি বলেন, সামরিক জোট ন্যাটোর মিত্ররা সিরিয়ার কুর্দি ওয়াইপিজি-সহ কুর্দি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুরস্ককে কখনোই সমর্থন করেনি। ওয়াইপিজি’কে পিকেকে-এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে মনে করে থাকে আঙ্কারা।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আরও বলেন, এই জোট তুরস্কের স্পর্শকাতরতার প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা ৩০ জন সন্ত্রাসীকে ফেরত চেয়েছি কিন্তু তারা অভিযুক্তদের ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তোমরা সন্ত্রাসীদেরকে হস্তান্তর করবে না, তাহলে তোমরা নেটওয়ার্কেও যোগ দিতে পারবে না।
তার ভাষায়, ‘ন্যাটোর সম্প্রসারণ আমাদের জন্য তখনই অর্থবহ হবে যখন আমাদের সংবেদনশীলতার প্রতি সম্মান দেখানো হবে।’
তুরস্ক শুরু থেকেই বলে আসছে যে, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন তুরস্কের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করছে। বুধবার এই দেশ দু’টি ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানানোর কয়েক ঘণ্টা পরই ন্যাটো জোট এ বিষয়ে আলোচনা করতে ব্রাসেলসে জড়ো হয়। কিন্তু তুরস্কের বিরোধিতার কারণে সে আলোচনা শুরুই করা যায়নি।
এর আগে ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছিলেন, আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির আলোচনার প্রথম ধাপ শেষ করা হবে। কিন্তু তুরস্কের বাধার মুখে দেশ দুটি আদৌ সদস্য হতে পারবে কি না তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, আঙ্কারা কিছু নিরাপত্তাগত উদ্বেগ তুলে ধরেছে এবং তারা বলেছে এই মুহূর্তে তারা ন্যাটো জোটে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের প্রবেশের বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে পারে না।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, (সমস্যা থাকলেও) দিন শেষে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের জন্য ‘কার্যকর এবং দক্ষ’ একটি যোগদান প্রক্রিয়া থাকবে। এসময় ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, তুরস্কের উদ্বেগ সমাধান করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সামরিক জোট ন্যাটোতে তুরস্ক যোগ দেয় ১৯৫২ সালে। নিয়ম অনুযায়ী, মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই জোটে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের সম্মতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে এই জোটে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ পাবে তুরস্ক।
টিএম