করোনা মোকাবিলায় কর্মকর্তাদের অপরিপক্কতার তীব্র সমালোচনা কিমের
করোনাভাইরাসে কাবু হয়ে পড়েছে উত্তর কোরিয়া। প্রতিদিনই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন দেশটির বহু মানুষ। সামনে আসছে প্রাণহানির তথ্যও। তবে কোভিডেই যে মৃত্যু হচ্ছে সে ব্যাপারে সরকারি ভাবে কোনো তথ্য সামনে আনেনি উত্তর কোরিয়ার সরকার।
এই পরিস্থিতিতে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়া এবং সেটি মোকাবিলায় কর্মকর্তাদের নেওয়া পদক্ষেপকে অপরিপক্ক বলে সমালোচনা করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। একইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তারও অভিযোগ এনেছেন তিনি। বুধবার (১৮ মে) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এই তথ্য সামনে এনেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
বার্তাসংস্থাটি বলছে, উত্তর কোরিয়াজুড়ে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বুধবার পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে নতুন করে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৮০ জন। তাদের মধ্যে ঠিক কতজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানায়নি কিম প্রশাসন।
অন্যদিকে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে নতুন করে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ জনে। তবে মৃত এসব ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কি না তা জানায়নি উত্তর কোরিয়া। অবশ্য করোনা সংক্রমণের কারণেই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়াজুড়ে করোনা মহামারির যখন এই অবস্থা তখন মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সভায় সভাপতিত্ব করেন কিম জং উন। সেখানে তিনি বলেন, সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপরিপক্কতা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে জটিলতা এবং কষ্ট বাড়িয়েছে।
রয়টার্স বলছে, বিশ্বজুড়ে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা মহামারি চললেও বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়া এতোদিন দাবি করে আসছিল তাদের দেশে কেউ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়নি। তবে গত সপ্তাহেই প্রথমবারের মতো দেশটি করোনা সংক্রমণের তথ্য স্বীকার করে। এরপর থেকে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে ১৭ লাখ ২০ হাজার মানুষের জ্বরের লক্ষণ দেখা গেছে এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মারা গেছেন ৬২ জন।
এরপরও উত্তর কোরিয়া দাবি করছে যে, দেশের করোনা পরিস্থিতি একটি ‘অনুকূল দিকে মোড় নিচ্ছে’। এছাড়া ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সভায় ‘সামগ্রিকভাবে মহামারি প্রতিরোধে ভালো সুযোগ বজায় রাখার বিষয়ে’ আলোচনা করা হয়েছে।
অবশ্য করোনার ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যেও পিয়ংইয়ং ঠিক কী কারণে এমন একটি ইতিবাচক মূল্যায়ন সামনে এনেছে সে সম্পর্কে কেসিএনএ’র প্রতিবেদনে বিস্তারিত বলা হয়নি। এছাড়া করোনা ছড়িয়ে পড়লেও দেশটি এখনও ব্যাপকভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেনি এবং দেশটিতে করোনা শনাক্তের পরীক্ষার সুযোগও বেশ সীমিত।
আর তাই এই রোগটি উত্তর কোরিয়ায় কতটা ব্যাপক এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তা মূল্যায়ন করা কঠিন হতে পারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেসিএনএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া আপাতত অতিরিক্ত কোয়ারেন্টাইন সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ, পরিবহন এবং পরীক্ষা আরও ভালোভাবে পরিচালনা করার বিষয়ে জোর দিচ্ছে।
এছাড়া ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা একটি কোভিড-১৯ চিকিৎসা নির্দেশিকা তৈরি করেছেন বলেও জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার এই সরকারি সংবাদমাধ্যমটি।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, উত্তর কোরিয়ায় করোনা মহামারি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। কারণ দেশটিতে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের টিকাদানের ব্যবস্থাই করা হয়নি। পাশাপাশি বাকি বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন এই দেশটির স্বাস্থ্য অবকাঠামোও উন্নত নয়।
এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় উত্তর কোরিয়ার পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা তিক্ততা ভুলে পিয়ংইয়ংয়ের দুর্দিনে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে সিউল।
টিএম