করোনা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন কিমের
উত্তর কোরিয়ায় শুরু হওয়া ‘করোনা সুনামি’ সামাল দিতে সেনাবাহিনী নিয়োগ করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। রোববার সরকারের সর্বোচ্চ ফোরাম পলিটব্যুরোর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত জানান তিনি।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তাসংস্থা কেসিএনএর বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের ফার্মেসিগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ সচল রাখতে সেনাবাহিনীর মেডিকেল ইউনিটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
১২ মে দেশে প্রথমবারের মতো করোনা প্রাদুর্ভাবের কথা নিশ্চিত করে উত্তর কোরিয়ার সরকারি প্রশাসন। কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
শ্বাসতন্ত্রের প্রাণঘাতী এই রোগের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ওই দিনই দেশজুড়ে লকডাউন জারি করে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন সরকারি প্রশাসন। পাশপাশি, ওষুধ পেতে জনগণের জন্য কোনো ভোগান্তি না হয়, সেজন্য ফার্মেসিগুলোকেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
লকডাউনে অবশ্য উত্তর কোরিয়ার সংক্রণ পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। কেসিএনএর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদেনে এএফপি জানিয়েছে, গত চার দিনে উত্তর কোরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ১২ লাখ ১৩ হাজার ৫৫০ জনে এবং কোভিড জনিত অসুস্থতায় ভুগে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫০ জন।
রোববারের বৈঠকে কিম জং উন বলেন, পিয়ংইয়ংয়ের ফার্মেসিগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের পর্যাপ্ত যোগান নেই। তিনি নিজে কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরে এই চিত্র দেখেছেন।
এ কারণে ওষুধের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে জনগণকে সরকারি ও সামরিক বাহিনীর রিজার্ভ থেকে ওষুধ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জনগণ যেন ওষুধ পায়, তা নিশ্চিত করতেই সামরিক বাহিনীর মেডিকেল ইউনিটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবকাঠামো এবং বছরের পর ধরে দেশের জনস্বাস্থ্য খাতের দুর্বল পরিচালনার সমালোচনা করেন কিম জং উন। সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভর্ৎসনাও করেন তিনি।
২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ রেখেছিল উত্তর কোরিয়া; এবং এতদিন পর্যন্ত কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন দাবি করে আসছিল— উত্তর কোরিয়ায় করোনার কোনো প্রাদুর্ভাব নেই।
এ পর্যন্ত সরকার কোনো টিকাদান কর্মসূচি না গ্রহণ না করায় গত দুই বছরে উত্তর কোরিয়ার জনগণ কোনো করোনা টিকার একটি ডোজও পাননি। গত বছর বিভিন্ন সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীন থেকে উত্তর কোরিয়ায় টিকার কয়েকটি চালান এসেছিল, কিন্তু সেসব ফিরিয়ে দিয়েছে কিম জং উন নেতৃত্বাধীন প্রশাসন।
তবে বর্তমান দুঃসময়ে উত্তর কোরিয়ার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োল রোববার এক ঘোষণায় বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়ায় সংকট মোচনে সার্বিকভাবে দেশটিকে সহায়তা করতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া।
উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনে কাজ করছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের ঐক্য মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের পর থেকেই দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।
এসএমডব্লিউ