ছবি: রয়টার্স

চীনে আক্ষরিক অর্থেই কোভিড সুনামি ঠেকিয়ে রেখেছে সরকারের ‘জিরো কোভিড নীতি’। যদি এই মুহূর্তে এ নীতি তুলে নেওয়া হয়—সেক্ষেত্রে আগামী মাত্র দেড় মাসে, অর্থাৎ জুলাই মাস শুরু হওয়ার আগেই করোনায় অন্তত ১৬ লাখ মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে দেশটিতে।

এছাড়া একই সময়সীমায় দেশজুড়ে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবেন কমপক্ষে ১১ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার মানুষ; এবং তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে ৫১ লাখ রোগীকে।

চীনের বৃহত্তম শহর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে এই গবেষণা প্রতিবেদনের পিআর রিভিয়্যু হয়েছে; আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে ছাপাও হয়েছে প্রতিবেদনটি।

চীনের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কঠোর লকডাউন জারি থাকা সত্ত্বেও মঙ্গলবার সাংহাইয়ে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৮৭ জন। এই সংখ্যা অবশ্য আগের দিন সোমবারের চেয়ে কম। সোমবার সাংহাইয়ে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ১৪ জন।

রাজধানী বেইজিংয়েও সংক্রমণ খানিক মঙ্গলবার। এ দিন বেইজিংয়ে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩৭ জন। আগের দিন সোমবার এই সংখ্যা চিল ৭৪ জন।

সংক্রমণের এই উল্লম্ফণ পরিস্থিতির জন্য জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাদের মতে, টিকাদান কর্মসূচি দেশের বাস্তব অবস্থার সাপেক্ষে তাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে পারেনি। এ কারণে মার্চে প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক মানুষ করোনা টিকার ডোজ পেয়েছেন।

করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ওমিক্রণের প্রভাবে মাসদেড়েক আগে সাংহাইসহ চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও নগরে সংক্রমণের উল্লম্ফণ ঘটতে চলেছিল, কিন্তু ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকারের কঠোর ‘জিরো কোভিড নীতির’ কারণে শেষ পর্যন্ত তা আর ঘটতে পারেনি।

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যখন করোনা বিষয়ক অধিকাংশ বিধিনিষেধ তুলে নিচ্ছে—সে সময়, গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে থেকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখাতে দেশের ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে দিনের পর দিন, এমনকি সপ্তাহের পর সপ্তাহ লকডাউন জারি রাখছে চীনের সরকার।

এদিকে, দিনের পর দিন লকডাউনে থাকতে থাককে বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে জনজীবন, সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটির অর্থনীতিও। চীন সরকারের ‘জিরো কোভিড নীতির; সমালোচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও)। সোমবার জাতিসংঘভিত্তিক এই সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস চীনের এই কঠোর নীতি সম্পর্কে বলেন, ‘ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদে এই নীতি কার্যকর থাকবে বলে আমাদের মনে হয় না। ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই গণ সতর্কতা প্রয়োজন, কিন্তু তার মানে এই নয়—দিনের পর দিন সবকিছু বন্ধ রাখতে হবে।’

ডব্লিউএইচও মহাপরিচালকের এই মন্তব্য করার দু’দিনের মধ্যে এই গবেষণাপত্র জনসমক্ষে আনল চীনের সরকার।