যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার জায়ান্ট এই প্রতিষ্ঠানের সদ্য মালিকানা পাওয়া ধনকুবের ইলন মাস্ক। তিনি বলেছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর থেকে টুইটারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবেন তিনি।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ মে) ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ফিউচার অব দ্য কার কনফারেন্সে বক্তৃতা করার সময় ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক এই মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আলজাজিরা। মূলত ২০২১ সালের শুরু থেকেই টুইটারে নিষিদ্ধ রয়েছেন ট্রাম্প।

এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি টুইটার। নিজেকে ‘বাক স্বাধীনতার নিরঙ্কুশ সমর্থক’ হিসেবে অভিহিত করা ইলন মাস্ক সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার জায়ান্ট এই প্রতিষ্ঠানটি ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে কিনে নিয়েছেন। তবে এখনও মালিকানা বুঝে পাননি তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতা চালাতে সমর্থকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারিতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে নিষিদ্ধ হন ট্রাম্প। ট্রাম্প সমর্থকদের সেদিনের সেই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন। এই হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ভিত কেঁপে উঠেছিল।

এই ঘটনার পর ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার হওয়া ওই অ্যাকাউন্টটিতে ট্রাম্পের প্রায় নয় কোটি ফলোয়ার ছিলেন। কিন্তু ক্যাপিটল হিলে হামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্প উসকানি দিয়েছেন, এমন অভিযোগ তুলে টুইটার কর্তৃপক্ষ বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিটির অ্যাকাউন্ট চিরতরে বন্ধ করে দেয়।

তবে মঙ্গলবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ফিউচার অব দ্য কার কনফারেন্সে ইলন মাস্ক বলেন, ট্রাম্পকে টুইটার থেকে নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়ে মানুষের মধ্যে তার (ট্রাম্প) দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করেছে। এমনকি এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘নৈতিকভাবে ভুল এবং নির্বোধ’ বলেও অভিহিত করেছেন মাস্ক।

টেসলার এই প্রধান নির্বাহী আরও বলেছেন, ‘আমি (ট্রাম্পের বিরুদ্ধে) স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করব। কিন্তু আমি এখনও টুইটারের মালিক নই, তাই এটি এমন কোনো জিনিস নয় যা অবশ্যই ঘটবে।’

ইলন মাস্ক বলেন, নিষেধাজ্ঞা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চুপ করাতে পারেনি। তবে নিষেধাজ্ঞার ফলে ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল চালু করেছেন এবং এর মাধ্যমে তার কণ্ঠস্বর কট্টর ডানপন্থীদের মধ্যে প্রসারিত হয়ে গেছে।

অবশ্য টুইটারে নিজের বন্ধ অ্যাকাউন্ট ফেরত পেতে গত বছরের অক্টোবরে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। অবশ্য এতে কোনো ফল হয়নি। এরপর সময় বদলেছে। বদলেছে ট্রাম্পের পরিকল্পনাও। অভিমানী ট্রাম্প এখন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করছেন।

আর তাই গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি আর টুইটারে ফিরবেন না। মালিকানা পরিবর্তনের পর এখন যদি তার বন্ধ থাকা অ্যাকাউন্টটি খুলেও দেওয়া হয়, তবুও তিনি ফিরবেন না।

ট্রাম্পে তখন বলেছিলেন, আমি টুইটারে যাচ্ছি না। আমি ট্রুথ-এ থাকব। ইলন টুইটার কিনেছেন কারণ তিনি এটিতে উন্নতি করতে পারবেন বলে আমি আশা করি। তিনি একজন ভালো মানুষ, কিন্তু আমি ট্রুথেই থাকতে যাচ্ছি।

তবে মাস্কের এই বক্তব্যের পর ট্রাম্প ঠিক কী সিদ্ধান্ত নেন সেটিই এখন দেখার বিষয়। এছাড়া ট্রাম্পের মুখপাত্রের কাছ থেকেও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

টিএম