বাবার শেষ ইচ্ছাপূরণে ঈদগাহের জন্য ৪ বিঘা জমি দান দুই হিন্দু বোনের
মৃত বাবার শেষ ইচ্ছাপূরণ করতে একটি ঈদগাহকে জমি দান করেছেন হিন্দু পরিবারের দুই বোন। চার বিঘা ওই জমির দাম প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই উজ্জ্বল নিদর্শনের পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে মুসলিমরা ঈদের দিন ওই ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনাও করেন।
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উধম সিংনগর জেলার কাশিপুর শহরের সম্প্রীতির এই নিদর্শন মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই এবং সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
বিজ্ঞাপন
ঈদগাহকে চার বিঘা জমি দান করা হিন্দু পরিবারের ওই দুই বোনের নাম সরোজ ও অনিতা। সংবাদমাধ্যম বলছে, কাশিপুর শহরের বাসিন্দা ব্রজনন্দন প্রসাদ রাস্তোগী ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার নিকটাত্মীয়দের কাছে জানান, নিজের চার বিঘা কৃষি জমি একটি ঈদগাহের জন্য দান করে যেতে চান তিনি। কিন্তু এই কথা দুই মেয়েকে জানানোর আগেই তিনি মারা যান।
তার দুই মেয়ে সরোজ এবং অনিতা সম্প্রতি আত্মীয়দের কাছ থেকে বাবার শেষ ইচ্ছার কথা জানতে পারেন। পরে ভাই রাকেশ রাস্তোগীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেন দুই বোন। রাজি হন রাকেশও। এরপরই সকল প্রয়োজনীয় আইনী কাজ শেষ করে সেই জমি ঈদগাহকে দান করেন তারা।
ভারতীয় মুদ্রায় চার বিঘা ওই জমির দাম দাম দেড় কোটি রুপিরও বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। রাকেশ বলেন, ‘বাবার শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানানো আমাদের কর্তব্য। আমার বোনেরা এমন কাজ করেছে যা বাবার আত্মাকে শান্তি দেবে।’
এই বিষয়ে ঈদগাহ কমিটির হাসিন খান বলেন, ‘দুই বোন সাম্প্রদায়িক ঐক্যের জীবন্ত উদাহরণ। ঈদগাহ কমিটি তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে। শিগগিরই দুই বোনকে সম্মানিত করা হবে।’
তিনি আরও জানান, জমিটি ইতোমধ্যে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশ যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ভুগছে, তখন এই দুই বোনের এমন মহৎ কাজ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
সংবাদমাধ্যম বলছে, সরোজ ও অনিতার বাবা ব্রজনন্দন প্রসাদ রাস্তোগী সকল ধর্মকে সম্মান করতেন। তিনি তার জমি দানের মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তবে নিজের এই ইচ্ছাপূরণের আগেই তিনি মারা যান।
মৃত্যুর আগে তিনি জমি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দেন। ঈদগাহের জন্য সরোজ ও অনিতার জমি অংশ হিসেবে ছিল। বাবার মৃত্যুর প্রায় ২০ বছর পর এসে আত্মীয়দের কাছ থেকে ব্রজনন্দনের শেষ ইচ্ছার কথা জানতে পেরে অবশেষে পৌনে দুই কোটি টাকা মূল্যের এই জমি ঈদগাহে দান করলেন তারা।
টিএম