ছবি: বিবিসি

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের তার নিজের জমি চাষ করতে গিয়ে প্রাচীন একটি মূর্তি পেয়েছেন এক কৃষক। ফিলিস্তিনের প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন চুনাপাথরের তৈরি এই মূর্তিটির বয়স অন্তত সাড়ে ৪ হাজার বছর।

তারা বলছেন, আজ থেকে প্রায় ৭ হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া (ইরাক, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন) অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল ক্যানন সভ্যতা। সেই সভ্যতার একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী ছিলেন আনাত। খান ইউনিসে যে মূর্তিটি পাওয়া গেছে, সেটি আনাতেরই মুখমন্ডলের অবয়ব।

যীশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৮ হাজার আগে প্রাচীন মানবসভ্যতা ব্রোঞ্জ যুগ শুরু হয়; অর্থাৎ, সে সময় যাবতীয় ধাতব বস্তু ও হাতিয়ার তৈরি হতো ব্রোঞ্জ দিয়ে। সেই সভ্যতারই শেষের দিকে তৈরি করা হয়েছিল এই মূর্তিটি। প্রাচীন ক্যানাইট সভ্যতায় সৌন্দর্য, প্রেম ও যুদ্ধের দেবী হিসেবে পূজিত হতেন আনাত।

সন্ধান পাওয়া মূর্তিটি যে আনাতেরই, তার আরেকটি প্রমাণ সেটির মাথার খোঁপা। প্রাচীন ক্যানাইট পুরাণে দেবীর চেহারার বর্ণনায় বলা হয়েছে, দেবীর খোঁপা তার মাথায় চুড়া করে বাঁধা ও একটি সাপ তার খোঁপা জড়িয়ে আছে। সন্ধান পাওয়া মূর্তিটির শীর্ষদেশেও এরকম চিহ্ন দেখা গেছে।

বর্তমানে গাজা ভূখণ্ড বলে আমরা যে এলাকাটিকে জানি, সেটি এক সময় মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন সভ্যতার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল—ঐতিহাসিকদের এই দাবির পক্ষে আরও একটি জোরালো প্রমাণ হাজির করল এই মূর্তি।

যে কৃষকের জমিতে এই পুরাকীর্তি পাওয়া গেছে, তার নাম নিদাল আবু ঈদ। বিবিসির প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জমিতে কাজ করতে করতে ভাগ্যক্রমে এটি পেয়েছি। প্রথম দিকে কাদায় ঢেকে থাকার কারণে এটা কী বস্তু, তা বুঝতে পারিনি; ধোয়ার পর মনে হলো এটা প্রাচীন কোনো পুরাকীর্তি হতে পারে।’

‘এটা যে মূল্যবান বস্তু, তা আমি শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলাম; কিন্তু এর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য যে এত বেশি তা আমাদের ধারণায় ছিল না।’

‘আমাদের এই ভূমি সেই প্রাচীন ক্যানাইট সভ্যতার অংশ ছিল, এজন্য আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।’

উচ্ছাস প্রকাশ করেছে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসও। হামাস পরিচালিত সরকারের পর্যটন ও পুরাকীর্তি বিষয়ক মন্ত্রী জামাল আবু রিদা এ বিষয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই মূর্তিটি সময়ের আঘাত সহ্য করে টিকে রয়েছে এবং এ আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, ফিলিস্তিনের সভ্যতা ও ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাসকে কেউ অগ্রাহ্য করতে পারবে না।’

গাজার কাসার আল বাশা যাদুঘরে মূর্তিটি প্রদর্শণের জন্য রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবু রিদা।

তবে মন্ত্রী যতই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করুন, ইসলামপন্থী হামাস যে ফিলিস্তিনের পুরাকীর্তি রক্ষায় আন্তরিক—তার প্রমাণ সাম্প্রতিক ইতিহাসে তেমন নেই।

কারণ, আবাসন ও সামরিক ঘাঁটি গড়ার জন্য ২০১৩ সালে গাজার তেল আল সাকান শহরে রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল হামাস। ওই শহরটিতে এর আগে ক্যানাইট সভ্যতার অনেক প্রাচীন স্থাপণা ও পুরাকীর্তি ছিল।

একই বছর প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ দেবতা অ্যাপোলোর একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি পাওয়াপ গিয়েছিল গাজায়, সেটিও পরে ‘গায়েব’ হয়ে যায়।

তবে ওই বছরের পর থেকে গাজার কোনো প্রাচীন স্থাপনা আর ধ্বংস করেনি হামাস। তবে এক্ষেত্রে প্রধান অবদান বিদেশি দাতাদের। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েই মূলত পুরাকীর্তি সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে ইসলামি এই গোষ্ঠী।

এসএমডব্লিউ