ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর আইএল-৭৬ মডেলের একটি পরিবহন বিমান। ছবিটি ২০১৯ সালে তোলা

দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। আর তাই রুশ সামরিক বাহিনীর আক্রমণে বিপর্যস্ত পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির পাশে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সামরিক জোট ন্যাটোসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

এরই মাঝে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো ইউক্রেনের একটি সামরিক বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ইউক্রেনীয় ওই বিমানটি পশ্চিমা দেশগুলোর পাঠানো অস্ত্রের চালান বহন করছিল বলেও জানিয়েছে দেশটি।

রোববার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। অবশ্য এর আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর অস্ত্র বোঝাই পরিবহনে হামলার হুমকি দিয়েছিল রাশিয়া।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেঙ্কোভের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম ইউক্রেনের ওডেসা শহরের বাইরে পশ্চিমা দেশগুলোর পাঠানো অস্ত্রের চালান বহনকারী ওই সামরিক বিমানে হামলার এই ঘটনা ঘটে।

ইউক্রেনের সামরিক বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করার বিষয়ে রাশিয়ার এই তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। এছাড়া বিমান ভূপাতিত হওয়ায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না সেটিও তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেনারেল ইগোর কোনাশেঙ্কোভ আরও দাবি করেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম সম্পর্কিত কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিমান ইউনিটগুলো।

এর আগে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর অস্ত্র বোঝাই পরিবহনে হামলার হুমকি দিয়েছিল রাশিয়া। মূলত ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতেই এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মস্কো। আর হুঁশিয়ারি উচ্চারণের তিন দিনের মাথায় পশ্চিমা দেশগুলোর পাঠানো অস্ত্রের চালান বহনকারী ইউক্রেনের একটি সামরিক বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করল রাশিয়া।

রাশিয়া সেসময় বলেছিল, ইউক্রেন অভিমুখে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের পাঠানো অস্ত্রের চালান মস্কোর জন্য বৈধ লক্ষ্যবস্তু। রাশিয়া সতর্ক করে সেসময় আরও দাবি করে, রুশ সামরিক বাহিনী পশ্চিমা হুমকির মুখে পড়লে সেটিরও কঠিন জবাব দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।

ফলে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় তাদের বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন দেশটির বহু নাগরিক। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলার জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নেতাদের কাছে আরও ভারী অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের দাবি নিয়মিতভাবেই জানিয়ে আসছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।

ইউক্রেনীয় এই প্রেসিডেন্টের এই আবেদনের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো একের পর এক অস্ত্রের চালান ইউক্রেনের হাতে সরবরাহ করছে। এছাড়া গত বুধবার ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ৮০০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

টিএম