ক্ষমতা হারানোর পর প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন ইমরান খান
অফিস ছাড়ার একদিন পর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন। সদ্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পরদিন আজ রোববার এই মন্তব্য করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইমরান খান বলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়। কিন্তু শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ আবার পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান বলেছেন, দেশের জনগণই সবসময় তাদের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা করে।
এদিকে, ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই। এরপরই পিটিআই চেয়ারম্যান কথিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: গভীর রাতে ইমরানের বাসভবনে ৪৫ মিনিটের বৈঠকে কী ঘটেছিল?
এর আগে, শনিবার দিনভর নানা নাটকীয়তা এবং মধ্যরাতে সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদত্যাগের পর অনাস্থা ভোটে হেরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান ইমরান খান। দেশটির ৩৪২ সদস্যের সংসদের ১৭৪ জনই ইমরান খানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) April 10, 2022
অনাস্থা ভোটে হেরে পাকিস্তানের সাত দশকের কোনো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারার ইতিহাসের অংশ হয়েছেন সাবেক এ ক্রিকেট তারকা। পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। তবে এ প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল তা খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। টানা পাঁচ দিন শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ৭ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারের সভাপতিত্বে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। দিনভর চলে নাটকীয়তা। কয়েক দফায় অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের ক্যারিশমাটিক প্রধানমন্ত্রীর পতনের কারণ কী?
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারবেন না জানিয়ে রাতে পদত্যাগ করেন জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার। পরে স্পিকারের আসনে বসেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সদস্য আয়াজ সাদিক। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভোটে হেরে যান ইমরান খান।
প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দাখিল
দেশটির ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদলীয় প্রার্থী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট শেহবাজ শরিফ ও সদ্য-ক্ষমতাচ্যুত পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতৃত্বাধীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
বিরোধীনেতা শহীদ খাকান আব্বাসি, সৈয়দ নাভিদ কামার, খুরশিদ আহমেদ শাহ, মহসিন দাওয়ার এবং অন্যান্যদের সাথে নিয়ে জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন শেহবাজ শরিফ। ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলছে, প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। বিকেল ৩টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। নতুন সূচি অনুযায়ী, দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে সোমবার দুপুর ২টায়।
এসএস