নাসার বিরল ছবিতে আমাজনের সোনার নদী
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তোলা ছবিতে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর আমাজন বনের গহীনে দ্যুতি ছড়ানো উজ্জল সোনার নদীর বিস্ময় জাগানো দৃশ্য প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করা একজন নভোচারী এ সংক্রান্ত কয়েকটি ছবিটি তুলেছেন বলে জানিয়েছে নাসা।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বলছে, ওই সোনার নদী আসলে পাহাড়ের বুকে খোঁড়া অবৈধ সোনার খনির ছবি বলে তাদের ধারণা, যার পেছনে রয়েছে অনুমোদনহীন স্বর্ণসন্ধানীরা। এমনিতে ওই খনিগুলো স্যাটেলাইটের ক্যামেরায় ধরা পড়ে না, কিন্তু ঘটনাচক্রে রোদ প্রতিফলিত হওয়ায় ছবিতে তা ফুটে উঠেছে উজ্জ্বল সোনার নদীর রূপ নিয়ে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলেছে, পেরুর দক্ষিণ-পূর্বের মাদ্রে দ্য দিয়স এলাকার আমাজন বনাঞ্চলে সোনার জন্য কতটা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলছে, নাসার ওই ছবিতে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ স্বর্ণ রপ্তানিকারক দেশ পেরুর মাদ্রে দ্য দিওস অঞ্চলটি আমাজনের জীববৈচিত্র্যের ‘হটস্পট’ এলাকা নামে পরিচিত। জাগুয়ার, আর্মাডিলো, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ আমাজনের এমন কিছু প্রাণী দেখা মেলে ওই জায়গায়, বিশ্বের অন্য কোনো অরণ্যে যেগুলোর অস্তিত্ব নেই।
আবার অন্যদিকে অবৈধ স্বর্নশিকারী বা গোল্ডমাইনারদের ‘স্বর্গভূমি’ ও এই মাদ্রে দ্য দিওস। প্রচুর সোনার খনি রয়েছে এ অঞ্চলে, যেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং বিপুল সংখ্যক স্বর্ণশিকারী সেখানে বসবাস করেন, যাদের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পেরুর ওই অঞ্চলে বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীব বৈচিত্র্য।
আকরিক থেকে সোনা উদ্ধারের জন্য টনকে টন পারদ ব্যবহারের কারণে বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই পারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নদী ও পরিবেশে মিশছে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা।
পাহাড়ের বুকে পুরনো নদী খাতে বিভিন্ন খনিজ উপাদান জমা হয়। সেই পথ ধরে সোনা খুঁজতে গিয়ে যে খনন চালানো হচ্ছে, তাতে পানি ঢুকে তৈরি হয়েছে শত শত ডোবা।
এর আগে চোরা স্বর্ণশিকারীদের অতিতৎপরতার কারণে ব্যাপকমাত্রায় পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল পেরুর লা পাম্পা এলাকা। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গতবছর ওই অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ৫ হাজারেরও বেশি অবৈধ স্বর্ণশিকারীদের উচ্ছেদ করে পেরুর সরকার।
২০১৯ সালের জানুয়ারির এক গবেষণার বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, স্বর্ণ সন্ধানীদের এই তৎপরতার কারণে তার আগের বছর ২০১৮ সালে পেরুর আমাজনে ২২ হাজার ৯৩০ একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে।
এসএমডব্লিউ