গোতাবায়া রাজাপাকসে, ছবি: বিবিসি

মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগের পর এবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন শরিক বিভিন্ন দলের এমপিরা। মঙ্গলবার শরিক দলগুলোর ৪০ জনেরও বেশি আইনপ্রণেতা পদত্যাগ করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

বিদ্যুৎ-জ্বালানি-খাদ্য-ওষুধের গুরুতর সংকটে জেরবার সাধারণ জনগণের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে এমপিরা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন শ্রীলঙ্কার এমপি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। মঙ্গলবার পার্লামেন্টে রাজাপাকসে ভাইদের রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার থেকে তার দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টিরে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

পার্লামেন্টে সিরিসেনা বলেন, ‘জ্বালানি ও গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের গ্যাস সহ প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বিপুল ঘাটতি দেখা দিয়েছে দেশে। ওষুধের মজুত না থাকায় দেশের হাসপাতালগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’

‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের দল জনগণের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যাওয়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির গুরুতর সংকট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে শ্রীলঙ্কায় যখন দিন দিনে সরকারপতন আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে, সে সময়ই এ পদক্ষেপ নিলেন এমপিরা।

তবে জনগণের পাশে থাকা বলতে শরিক নেতারা কী বোঝাতে চাইছেন, তা স্পষ্ট নয়। কারণ সরকার থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলেও এখনও প্রকাশ্যে বিরোধীদের সমর্থন দেয়নি কোনো শরিক দল।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়া এর একটি বড় কারণ।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়; কিন্তু দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই কমেছে যে, তা দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটানো যাবে না।

বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে শ্রীলঙ্কায়। গত মাসে ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কান রুপির মান পড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।

এদিকে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকায় দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে খাদ্য-ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না দেশটি, ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার গণপরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা।

বিদ্যুৎ-খাদ্য-ওষুধ-জ্বালানি সংকটে অতিষ্ঠ শ্রীলঙ্কার জনগণ গত কিছু দিন ধরে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন, এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোসহ দেশের সব বড় শহরে আন্দোলন শুরু করেছেন তারা। জনরোষ সামাল দিতে শনিবার দেশজুড়ে তিন দিনের কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয় দেশটির সরকার।

কারফিউয়ের দ্বিতীয় দিন, রোববার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ব্যাতীত ২৬ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভার সবাই একযোগে পদত্যাগ করেন।

তবে আন্দোলনরত জনগণ এতে সন্তুষ্ট নন। তারা গোতাবায়া ও তার বড়ভাই মহিন্দারও পদত্যাগ চাইছেন। বিবিসিকে কলম্বোর এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি, কারণ ডাল-ভাতও দিন দিন আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমরা কাজে যেতে পারছি না, আমাদের শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না।’

আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘পেট্রোল নেই, ডিজেল নেই, বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, কাগজ নেই…একটা দেশের পরিস্থিতি আর কত খারাপ হতে পারে?

শ্রীলঙ্কার বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা এ সম্পর্কে বিবিসিকে বলেন, ‘জনগণ চাইছে প্রেসিডেন্ট তার নেতৃত্বাধীন পুরো সরকারসহ পদত্যাগ করুক।’

তবে গোতাবায়া রাজাপাকসে ও মাহিন্দা রাজাপাকসে দৃশ্যত এই দাবি আমলে নিচ্ছেন না। পদত্যাগের পরিবর্তে সম্প্রতি গোতাবায়া বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

বিরোধী দলগুলো অবশ্য প্রেসিডেন্টের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

এসএমডব্লিউ