শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হওয়ার পর ভারতের তামিলনাড়ুর ধনুষ্কড়িতে শরণার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। ভয়াবহ সমুদ্রযাত্রার কথা তাদের মুখে। ২২ বছরের মেরি ক্ল্যারিনের কোলে চার মাসের সন্তান। স্বামী গজেন্দ্রনের সঙ্গে মার্চের শেষ সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা থেকে এই পরিবারটি রওনা দেয় ভারতের দিকে। রামেশ্বরম হয়ে ধনুষ্কড়িতে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেন তারা। সেই মতো এক মৎসজীবীর সঙ্গে কথাও বলেন। মৎসজীবী জানান, ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই পুরো রাস্তা তিনি নিয়ে যাবেন ওই পরিবারকে উত্তাল সমুদ্রের মধ্য দিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি ওই মৎসজীবী।

ধনুষ্কড়ির কোস্ট গার্ডের অফিসে বসে মেরি জানিয়েছেন, প্রথমেই ওই মৎসজীবী তাদের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে নেন। এরপর মাঝ সমুদ্রে একটি ছোট্ট বালুর দ্বীপের উপর তাদের নামিয়ে দিয়ে ওই মৎসজীবী জানান, অন্য একটি নৌকা এসে তাদের ভারতে নিয়ে যাবে। মৎসজীবী ফিরে যান শ্রীলঙ্কার দিকে। কিন্তু ভারত থেকে আর কোনো নৌকা আসে না। খাবার নেই, জল নেই, দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে শিশুর জন্য রাখা সামান্য দুধ। জনমানবশূন্য ওই বালিয়ারির ওপর বসে তাদের মনে হয়েছিল, না খেতে পেয়ে সেখানেই মরে যেতে হবে।

এদিকে, ভারত-শ্রীলঙ্কা সমুদ্র-সীমান্তে তিনজন আটকে আছেন বলে খবর পায় ভারতের কোস্ট গার্ড। মৎসজীবীদের কাছ থেকেই সম্ভবত খবর মিলেছিল। এরপর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ভারতের কোস্টগার্ড। ওই পরিবারটিকে তুলে নিয়ে আসা হয় ধনুষ্কড়িতে। জাফনা যুদ্ধ, এলটিটিইর সময় এই ধনুষ্কড়িতে প্রচুর শ্রীলঙ্কার শরণার্থী থেকেছেন। কিন্তু এখন আর সেখানে খুব বেশি শ্রীলঙ্কার শরণার্থী নেই। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ফের সেখানে শ্রীলঙ্কার শরণার্থী আসতে শুরু করেছেন।

ভারতীয় কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, মার্চের শেষ সপ্তাহে অন্তত ১৬ জন শ্রীলঙ্কার নাগরিক ধনুষ্কড়িতে পৌঁছেছেন। সকলেই মাছ ধরার নৌকা অথবা ফাইবারের তৈরি ভেলায় চড়ে ভারতে এসেছেন। আরও বহু মানুষ আসার চেষ্টা করছেন বলেও তারা জানিয়েছেন।

কেন আসছেন?

শরণার্থীদের বক্তব্য, গত কয়েক মাসে শ্রীলঙ্কায় জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে জরুরি অবস্থা। জিনিসের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। ফলে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়েছে মধ্যবিত্ত। তাদের ধারণা পরিস্থিতি আরো সংকটজনক হবে। সে কারণেই তারা ভারতে আসতে শুরু করেছেন। তবে কোস্টগার্ডের বক্তব্য, শরণার্থীদের জায়গা দেওয়ার বিষয়ে সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত তাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। ফলে শরণার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কোস্টগার্ডের হেফাজতেই রাখা হচ্ছে।

ভারত কী বলছে

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, শ্রীলঙ্কা থেকে বড় সংখ্যায় শরণার্থী ভারতে ঢুকতে শুরু করবেন বলে তারা মনে করছেন। তবে তাদের নিয়ে কী করা হবে, এখনও পর্যন্ত সে বিষয়ে সরকারি স্তরে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ভারত শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে।

ধনুষ্কড়ির স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এখন পর্যন্ত যারা এসেছেন, তাদের অধিকাংশই জাফনার মানুষ। তবে দেশের অন্যপ্রান্ত থেকেও মানুষ পালানোর চেষ্টা করছেন বলেও শরণার্থীরা জানিয়েছেন। ডি ডব্লিউ।

এসএস