ইউক্রেনের খারকিভ শহরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলার পর আগুন ধরে যায়। পাশেই রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। গত ২৫ মার্চের ছবি

টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে অনেকটাই ধ্বংসস্তপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেন। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি রুশ সেনাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে বেসামরিক বাড়ি-ঘর, হাসপাতাল এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রও। এই পরিস্থিতিতে আগেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছিল ইউক্রেনসহ পশ্চিমা অনেক দেশ ও সংস্থা।

আর এবার ইউক্রেনে ‘যুদ্ধাপরাধের’ কঠোর নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। একইসঙ্গে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ হামলায় হতাহত সাধারণ মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় ইউক্রেনীয় পরিস্থিতিকে সিরিয়ার যুদ্ধের সাথেও তুলনা করেছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক এই পর্যবেক্ষক সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বার্তাসংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, ‘ইউক্রেনে যা ঘটছে তা মূলত সিরিয়ায় আমরা যা দেখেছি সেটিরই পুনরাবৃত্তি।’ বিশ্বে মানবাধিকারের পরিস্থিতি নিয়ে সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তিনি একথা বলেন।

রুশ সেনাদের প্রবল হামলার মধ্যে বেশ কয়েকটি শহর থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে মানবিক করিডোরকে ‘মৃত্যুর ফাঁদে’ পরিণত করার অভিযোগও করেন অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। নারী এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নির্বিচারে হামলা চালানোর বিরুদ্ধে। আমরা (ইউক্রেনের) বেসামরিক অবকাঠামোগুলোতে ইচ্ছাকৃত হামলার মধ্যেই রয়েছি।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, ‘রাশিয়া সিরিয়াতে যা করেছে, আমরা এখানে (ইউক্রেনে) সেই একই দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর একমাসেরও বেশি সময় পর এই মুহূর্তে মানবাধিকার বিষয়ক এই সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- (ইউক্রেনে) যুদ্ধাপরাধ বাড়ছে।’

এদিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক পৃথক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পূর্ব ইউরোপে অ্যামনেস্টির পরিচালক ম্যারি স্ট্রাথার্স বলেন, সিরিয়া ও চেচনিয়াতে রাশিয়া যে কৌশল অবলম্বন করেছিল, ইউক্রেনেও তারা একই কৌশল ব্যবহার করছে বলে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে অবস্থানরত গবেষকরা নথিবদ্ধ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, সিরিয়া ও চেচনিয়ার মতো ইউক্রেনেও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা করছে রাশিয়ার সেনারা। একইসঙ্গে ইউক্রেনে মস্কো এমন কিছু অস্ত্রের ব্যবহার করছে যার ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।

এছাড়া ইউক্রেনে ভয়ঙ্কর ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এনিয়ে ইতোমধ্যেই সরব হয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন।

একইসঙ্গে চলতি মাসের শুরুতেই জাতিসংঘে নিযুক্ত ইউক্রেনের দূত ওকসানা মারাকারোভা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। এখন যদি সত্যিই রাশিয়া ক্লাস্টার ও ভ্যাকুয়াম বোমা ইউক্রেনে নিক্ষেপ করে থাকে তবে তা হবে সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ।

টিএম