রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সংকট সমাধানে গত কয়েক সপ্তাহে কয়েকবার রুশ প্রেসিডেন্টের সাথে মুখোমুখি কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। রোববারও কয়েকজন রুশ সাংবাদিকের সাথে এক সাক্ষাৎকার জেলেনস্কি কার্যত একই কথা বলেন।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, একটি ‘নিরপেক্ষ এবং নির্জোট’ দেশ হিসেবে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে তিনি রাজী। তবে একইসাথে তিনি বলেন যে কোনো মীমাংসা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে মুখোমুখি কথা বলে হতে হবে। কিন্তু তেমন বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

সার্বিয়ার মিডিয়াতে সোমবার এক সাক্ষাৎকারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, উপযুক্ত প্রস্তুতির আগে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হলে হিতে-বিপরীত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন তার ইউক্রেনীয় প্রতিপক্ষের সাথে দেখা করতে অস্বীকার করেননি, তবে এরকম কোনো বৈঠক হতে হলে তার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত হতে হবে।’

এদিকে মঙ্গলবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে নতুন দফা বৈঠক শুরু হতে পারে বলে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে রোববার এক টেলিফোন আলাপের পর নতুন দফা শান্তি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৈঠকের কথা জানালেও এ দফায় কী কী নিয়ে আলোচনা হবে তা জানাতে অস্বীকার করেন। তবে এই বৈঠকের দু’দিন আগে রুশ সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকারে শর্ত সাপেক্ষে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার যে ইচ্ছা জেলেনস্কি জানিয়েছেন তা নিয়েই ইস্তাম্বুলে কথা হতে পারে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন।

অবশ্য ইউক্রেন থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জোনাহ ফিশার বলছেন, যেসব শর্ত প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জুড়ে দিয়েছেন তাতে রাশিয়া সহসা রাজী হবে সে সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তিনি বলেন, প্রথম কথা জেলেনস্কি যেটা বলেছেন যে, ইউক্রেন ন্যাটো জোটে ঢুকবে না কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, এটি প্রেসিডেন্ট পুতিনের আদৌ পছন্দ হবে না।

দ্বিতীয়ত, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন যে, কোনো চুক্তির আগে রুশ সৈন্যদের ২৪ ফেব্রুয়ারির আগের অবস্থানে ফিরতে হবে। অর্থাৎ তিনি পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার চান। কিন্তু এতো সৈন্য এবং অস্ত্র-সরঞ্জাম রেখে দখল করা ভূখণ্ড বিশেষ করে দক্ষিণ এবং পূর্বের কৌশলগত-ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছেড়ে রুশ সৈন্যরা চলে যাবে সে সম্ভাবনাও কম।

তৃতীয়ত, যে কোনো ছাড় গণভোটে পাস হতে হবে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করে সেই গণভোটের ফলাফলের জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন বসে থাকবেন সে সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রেসিডেন্ট পুতিন এখন ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে কী অর্জন করতে চাইছেন তা অস্পষ্ট।

জোনাহ ফিশার বলছেন, ‘ইউক্রেনকে ন্যাটোতে প্রবেশ থেকে বিরত রেখেই কি পুতিন সন্তুষ্ট হবেন? নাকি ইউক্রেনের আরও কিছু এলাকা তিনি নিয়ে নিতে চান? নাকি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ইউক্রেন যাতে কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে না পারে সেটি নিশ্চিত করাই এখন তার মূল লক্ষ্য?’

বিবিসির এই সংবাদদাতা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের মনে কি রয়েছে তার ওপরই নির্ভর করবে সহসা কোনো মীমাংসা হবে কি না।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

টিএম