ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রামপুরহাটের বগটুই-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাজ্যটির বিধানসভায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বগটুই-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে সোমবার (২৮ মার্চ) বিক্ষোভ দেখানোর একপর্যায়ে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন বিজেপি বিধায়করা।

এ ঘটনায় পাঁচ বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিসহ কলকাতার সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই তথ্য উঠে এসেছে।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বগটুইতে নিরীহ মানুষের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার বিধানসভার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। স্পিকার তাদের থামানোর চেষ্টা করলেও তাতে উত্তেজনার পারদ আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে বিজেপি ও তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। 

পরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তুলে অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান বিজেপি বিধায়করা। তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের কার্যত হাতাহাতিতে গেরুয়া শিবিরের ১০ বিধায়ক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

উভয়পক্ষের বিধায়কদের হাতাহাতিতে বিজেপির চিফ হুইপ মনোজ টিগ্গার জামা ছিঁড়ে যায়। চশমা ভেঙে যায় এক বিধায়কের। চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের নাক ফেটে গেছে বলে দাবি করেছে কলকাতার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। পরে এসএসকেএম হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তাকে। অসিত মজুমদারের অভিযোগ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাতে প্রহৃত হয়েছেন তিনি।

এদিকে বিধানসভায় বিজেপি ও তৃণমূল বিধায়কদের হাতাহাতির ঘটনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ পাঁচজন বিধায়ককে সাসপেন্ড করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, সোমবার বিধানসভার অধিবেশনের শুরুতেই বগটুই-কাণ্ড নিয়ে বিরোধী দলনেতার বক্তব্যেই মূলত গোলমালের সূত্রপাত হয়।

সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিরোধী দলনেতা ও বিজেপির চিফ হুইপ মনোজ টিগ্গা ও শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, ও ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণকে সাসপেন্ড করার প্রস্তাব আনেন। সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করে বক্তৃতা করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

এরপর জয়পুরের বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতোর সাসপেনশনের পক্ষে কথা বলেন দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। এরপরই স্পিকার ওই পাঁচ বিধায়কের সাসপেনশন ঘোষণা করেন। পরে বিরোধী দলনেতা রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। চলতি বছর আগামী অধিবেশনগুলোতেও শুভেন্দু-সহ ওই পাঁচ বিজেপি বিধায়ক সাসপেন্ড থাকতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেন, ‘বিধানসভা নির্বাচনে যে সব সম্প্রদায়ের ভোট তৃণমূল পায়নি তাদের প্রতিনিধিদের বেছে বেছে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখতে হবে বিধানসভা কেবল স্পিকারের ক্ষমতাবলেই চলে না, এখানে রাজ্যপালের একটি ভূমিকা রয়েছে। আর আমাদের সাসপেন্ড করে রাখা হলে আমরা অধিবেশন কক্ষের বাইরে অধিবেশন বসিয়ে মক পার্লামেন্ট করে প্রতিবাদ জানাব।’

টিএম