মারিউপোলের পূর্বে রাশিয়ার তাগানরগের একটি স্পোর্টস সেন্টারে বহু শরণার্থীকে রাখা হয়েছে

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোল শহর থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে জোর করে রুশ ভূখণ্ডে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কিয়েভ। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইউক্রেনীয় এই শহরটি রুশ হামলায় বিধ্বস্ত এবং প্রায় এক মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে রুশ সেনারা। সোমবার (২৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে- মারিউপোল থেকে ৯০ কিলোমিটার (৫৬ মাইল) পূর্বে বেজিমেনে নামক স্থানে একটি অস্থায়ী শিবিরে আনুমানিক ৫ হাজার মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে রাশিয়া।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম এই আশ্রয় শিবির এবং দক্ষিণ রাশিয়ার শহর তাগানরগে মারিউপোলের শরণার্থীদের স্থানান্তরের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। সেসব খবরে বলা হয়েছে, সেখান থেকে কেউ কেউ ট্রেনে করে ইয়ারোস্লাভল এবং রিয়াজানে গেছে। এটি এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি উত্তরে অবস্থিত।

ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, কিয়েভের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় ছাড়াই ইউক্রেন থেকে ৪০ হাজার মানুষকে রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনের অন্য কর্মকর্তারাও রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ‘সরিয়ে নেওয়ার’ অভিযোগ করেছেন।

অবশ্য রাশিয়ার এলাকায় ঠিক কত মানুষ স্বেচ্ছায় গেছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ ইউক্রেনীয়দের অনেকের রাশিয়ায় আত্মীয় রয়েছে। আর তাই রুশ ভূখণ্ডে সরিয়ে নেওয়া বা নির্বাসিতদের সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।

রাশিয়া অবশ্য হাজার হাজার ইউক্রেনীয়কে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। এছাড়া এ ধরনের জবরদস্তিমূলক নীতি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনেরও লঙ্ঘন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।

সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ৩০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়।

উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দার মারিউপোল শহরটি দখল করা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি আজভ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর কাছেই অবস্থিত।

মারিউপোলের শহর কাউন্সিল জানিয়েছে, রুশ সামরিক অভিযানের কারণে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার বেসামরিক মানুষ শহর থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া আরও ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছেন।

এছাড়া তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রুশ সেনাদের অনবরত হামলায় কৌশলগত এই শহরটি কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ফলে শহরে আটকে পড়া আতঙ্কিত বেসামরিক মানুষ ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। একইসঙ্গে শহরে পানি, খাবার এবং ওষুধের মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বিবিসি অবশ্য মারিউপোল থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়ার পরিসংখ্যান বা সেখানে নিহতের সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

টিএম