রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীকে ঠেকাতে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর শান্তিরক্ষী পাঠানোর যে প্রস্তাব পোল্যান্ড দিয়েছে, তার জেরে পোল্যান্ডকে সতর্কবার্তা দিয়েছে রাশিয়া।

বুধবার মস্কোর স্টেট ইনস্টিটিউশন অব ইন্টারন্যাশনার রিলেশন্সে দেওয়া এক ভাষণে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘ইউক্রেনে যদি ন্যাটো শান্তিরক্ষী পাঠায়, সেক্ষেত্রে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি সংঘাত শুরু হবে, যা আমরা সবাই এড়িয়ে চলতে চাই। কেবল বাস্তবিক অবস্থা বিবেচনা করেই যে এই ব্যাপারটি এড়িয়ে চলা হচ্ছে— তা নয়; এর সঙ্গে নীতির প্রশ্নও জড়িত।’

একই দিন রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কে বলেন, ‘যদি ন্যাটো সত্যিই ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর পদক্ষেপ নেয়, সেক্ষেত্রে এটি খুবই বেপরোয়া ও বিপজ্জনক একটি সিদ্ধান্ত হবে। কারণ, তার পরিণতিতে যে ফলাফল আসবে, তা হবে রীতিমতো ভয়াবহ।

গত শুক্রবার পোল্যান্ডের সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে ব্রাসেলসে ন্যাটোর বৈঠকে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেবে পোল্যান্ড।

অবশ্য গত সপ্তাহ থেকেই এ বিষয়ে তৎপরতা শুরু করেছে পোল্যান্ড। সে সময় কিয়েভ সফরে গিয়েছিলেন দেশটির সরকারি দলের নেতা ইয়ারোস্লাও ক্যাজিনিস্কি। সেখানে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে আমি মনে করি এখন এখানে ন্যাটো বা সমধর্মী বৃহৎ কোনো জোটের শান্তিরক্ষা অভিযান শুরু করা জরুরি। ইউক্রেনের নিরাপত্তা রক্ষাই হবে শান্তিরক্ষীদের মূল লক্ষ্য।’

ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব মূলত ন্যাটোকে ঘিরেই। ২০০৮ সালে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ইউক্রেন আবেদন করার পর থেকেই তিক্ততা শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে।

পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে কেন্দ্র করে ২০০৮ সাল থেকে দ্বন্দ্ব চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ওই বছরই ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল ইউক্রেন। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী সদস্য’ মনোনীত করার পর আরও বাড়ে এই দ্বন্দ্ব।

ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।

কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।

অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

মঙ্গলবার ২৭তম দিনে পৌঁছেছে এই অভিযান। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের বক্তব্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যদি কোনো ভাবে ন্যাটো জড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে এ যুদ্ধ আর ইউক্রেনে সীমাবদ্ধ থাকার পরিবর্তে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং অবশ্যম্ভাবীভাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ