ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অবরুদ্ধ শহর মারিউপোল থেকে কোনো রকমে জীবন নিয়ে পালিয়েছেন ভিক্টোরিয়া (২৭)। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অনবরত গোলাবর্ষণে এই শহরে যে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে তার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, মারিউপোল শহর একেবারে ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষের বাঁচার অবলম্বন আর নেই সেখানে। খাবার, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।

বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই তরুণী বলেছেন, তিনি মারিউপোল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে পালিয়েছেন। মারিউপোলে পরিবারের সদস্যদের ফেলে রেখে এসেছেন তিনি।

ভিক্টোরিয়া বলেছেন, ‘আমার শহর একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।’ তিনি রাশিয়ার প্রত্যেকদিন গোলাবর্ষণের শব্দ শোনার কথা যখন বলছিলেন, তখন তার কণ্ঠ কাঁপছিল। ‘মানুষ ভবনের বেইজমেন্টে অবস্থান করছে, তবে সেটি আর নিরাপদ নেই। তারা বোমা বর্ষণ করায় শক্ত বেইজমেন্টও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষের কাছে খাবার এবং পানিও নেই। আমার পরিচিত তিনজন শিশু পানিশূন্যতায় মারা গেছে। এটি একবিংশ শতাব্দি, আমার শহরে শিশুরা পানিশূন্যতায় মারা যাচ্ছে। তারা এখন ক্ষুধার্ত।’

ভিক্টোরিয়া বলেন, পরিবারের অন্য সদস্যদের মারিউপোল ছেড়ে যেতে সাহায্য করতে পারেননি তিনি। তবে তাদের এই শহর থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

‘আমি ইউক্রেনেই অবস্থান করবো। মারিউপোলে আমার পরিবারকে রক্ষার চেষ্টা করবো। মারিউপোল আমার জীবন। আমি বুঝতে পারছি না কেন, আমি রাশিয়ার কারণে আমার শহর, আমার দেশ ছেড়ে যাব।’

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিউপোলে হামলার তীব্রতা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকে সোমবার আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত আল্টিমেটামও দিয়েছিল রাশিয়া।

কিন্তু মারিউপোলের শহর কর্তৃপক্ষ আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম প্রত্যাহার করে পাল্টা প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রুশ সৈন্যদের টানা গোলাবর্ষণে শহরটিতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। গত কয়েক দিনে মারিউপোলের রাস্তায় রাস্তায় বেসামরিক মানুষের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

এসএস