ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রায় এক মাস হতে চলেছে। বারবার আলোচনার পরও প্রতিবেশী এই দুই দেশের উত্তেজনা কমার লক্ষণ নেই। ইউক্রেন আক্রমণ করে সারা বিশ্বেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এমনকি নিজের দেশেও বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন সাবেক এই গুপ্তচর।

আর তাই রাশিয়ায় যুদ্ধবিরোধী যেকোনো ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ রোধে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে রুশ সরকার। কিন্তু এর মাঝেই এমন এক খবর কথা উঠে এসেছে, যা শুনে অনেকেই চমকে গেছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য মিরর গত রোববার (২০ মার্চ) পৃথক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা প্রধানের দাবি করেছেন- রাশিয়ার একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি রুশ প্রেসিডেন্টকে বিষপ্রয়োগে হত্যার পরিকল্পনা করছে। নীতিগতভাবে তারা রুশ প্রেসিডেন্টের বিরোধী। প্রভাবশালী ওই রুশ এলিটরা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী ও অভিজাত শ্রেণির একাংশকে একত্রিত করার কাজও শুরু করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে হত্যার চক্রান্ত করা ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। তাদের লক্ষ্য, ভ্লাদিমির পুতিনকে রুশ প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট পদে নিয়ে আসা। কারণ পুতিনকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানো গেলেই কেবল পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার ব্যবসায়িক সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পথও সুদৃঢ় হবে।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটি নিয়েও এই দলটি হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা এই অবস্থা থেকে বের হতে চাইছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা বিভাগ।

ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, ‘রাশিয়ার রাজনৈতিক অভিজাত সম্প্রদায়ের একাংশ পুতিনের উত্তরসুরি হিসেবে ওলেক্সান্দ্র বর্তনিকোভের নামকে প্রধান্য দিচ্ছে। তিনি বর্তমানে রাশিয়ার সরকারি সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন এবং পুতিনের পক্ষেই কাজ করছেন।’

সংবাদমাধ্যম বলছে, ওলেক্সান্দ্র বর্তনিকোভ ও তার দপ্তরই ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে বিশ্লেষণ করেছিলেন। বর্তনিকোভ ও তার সহযোগী রুশ অভিজাতরা পুতিনকে সরাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছেন।

পুতিনকে সরাতে তাদের হাতে বেশ কিছু বিকল্প রয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিষ খাইয়ে অথবা কোনো দুর্ঘটনা দেখিয়ে বা অন্য কোনো ভাবে পুতিনকে হত্যা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের গোয়েন্দা বিভাগ।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য ওলেক্সান্দ্র বর্তনিকোভকে সামনে নিয়ে আসার বিষয়টি বিস্ময়কর। কারণ পুতিন ও বর্তনিকোভ উভয়েই লেনিনগ্রাদে সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে কাজ করেছিলেন। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের পক্ষেই কাজ করছেন বর্তনিকোভ।

মিরর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর গত ২৫ দিনে দেশটিতে প্রায় ১৫ হাজার সেনা হারিয়েছে রাশিয়া। এর জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন রুশ সামরিক বাহিনীর ৮ জন জেনারেলকে বরখাস্ত করেছেন।

টিএম