ন্যাটোর সদস্য হতে চাই না, যুদ্ধবিরতি চাই : জেলেনস্কি
টানা প্রায় একমাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে রাশিয়া। জল, স্থল ও আকাশপথে চালানো রুশ সেনাদের জোরদার হামলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি। অবশ্য যুদ্ধ বন্ধে মস্কো-কিয়েভ আলোচনা অব্যাহত রাখলেও এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো ফল আসেনি।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার (২১ মার্চ) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি, রুশ সেনা প্রত্যাহার এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তার গ্যারান্টির বিনিময়ে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ না চাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি আলোচনা করতে প্রস্তুত। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
বিজ্ঞাপন
সোমবার রাতে ইউক্রেনীয় টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি সবার জন্য একটি আপস: কারণ পশ্চিমা দেশগুলো জানে না তারা ন্যাটোর বিষয়ে আমাদের সাথে কী করবে, ইউক্রেন নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায় এবং রাশিয়াও চায় না (পূর্ব ইউরোপে) ন্যাটোর আরও সম্প্রসারণ হোক।’
জেলেনস্কি আরও বলেছেন, যুদ্ধবিরতি হলে এবং নিরাপত্তার গ্যারান্টি প্রদানের প্রক্রিয়া সামনের দিকে এগিয়ে গেলে ক্রিমিয়া এবং রাশিয়ার-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে থাকা পূর্ব ডনবাস অঞ্চল নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত কিয়েভ।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন রাশিয়ার আগ্রাসনের সমাপ্তি আলোচনায় ব্যর্থ হওয়া মানে ‘তৃতীয় একটি বিশ্বযুদ্ধ’ বেঁধে যাওয়া। জেলেনস্কির বলেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সরাসরি আলোচনা করতে প্রস্তুত। আলোচনাই যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র উপায়।
এর আগে গত ৭ মার্চ মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে আর ইচ্ছুক নয় ইউক্রেন। একইসঙ্গে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল নিয়েও আলোচনায় রাজি হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
দোভাষীর মাধ্যমে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, তিনি আর ন্যাটোর সদস্য হতে ইচ্ছুক নন। তিনি বুঝে গেছেন, ইউক্রেনকে গ্রহণ করতে ন্যাটো প্রস্তুত নয়। তার ভাষায়, ‘আমি এমন একটা দেশের প্রেসিডেন্ট থাকতে চাই না, যারা হাঁটু গেড়ে ভিক্ষা চায়।’
জেলেনস্কি আরও বলেছিলেন, তিনি বুঝেছেন যে, ন্যাটো রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করবে না। তারা এই বিতর্কিত বিষয়ের মধ্যে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ৩০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়।
টিএম