ইউক্রেনে ফের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করেছে রাশিয়া। দেশটির দক্ষিণের মাইকোলাইভ অঞ্চলে সাঁজোয়া যানে জ্বালানি সরবরাহ করা হয় এমন একটি ডিপো লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। হামলায় ওই ডিপো ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে উত্তর ইউক্রেনের ওভরুচ শহরের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর ১০০ জনেরও বেশি সদস্য এবং অনেক বিদেশি ভাড়াটে সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সমুদ্র থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ওই হামলা চালানো হয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মাইকোলাইভ অঞ্চলের কোসতিয়ান্তিনিভকার বসতির কাছে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর জ্বালানি এবং লুব্রিকেন্টের বিশাল একটি মজুদ ধ্বংস করা হয়েছে।

জ্বালানির ওই ডিপোটি দক্ষিণে ইউক্রেনীয় সাঁজোয়া যানগুলোর জ্বালানির প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়া দ্বীপের আকাশসীমা থেকে মাইকোলাইভ অঞ্চলে কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এছাড়া কাস্পিয়ান সাগর থেকেও ডিপোটি লক্ষ্য করে কালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।

এর আগে, শনিবার ইউক্রেনে প্রথমবারের মতো নতুন কিনজাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর দাবি জানায় রাশিয়া। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে রোমানিয়া সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ভূগর্ভস্থ একটি অস্ত্রাগার ধ্বংস করতে ওই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার করা হয় বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

শনিবার মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক অঞ্চলের ডেলিয়াটিন গ্রামে ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানের গোলাবারুদের ভূগর্ভস্থ বিশাল একটি অস্ত্রাগার ধ্বংস করা হয়েছে। এই অস্ত্রাগার ধ্বংসে হাইপারসনিক অ্যারোব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি কিনজাল ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করা হয়।

মাইকোলাইভ অঞ্চলে জ্বালানির ডিপো আক্রান্ত হওয়ার তথ্য ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে নিশ্চিত করে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বলেছে, ডিপোটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রটি কোন ধরনের ছিল সে ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কী?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিভিন্ন সময় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রে তার দেশের বিনিয়োগের কথা তুলে ধরেছেন, যা শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে।

পরিসংখ্যানও বেশ চমকপ্রদ। রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মতে— কিনঝাল ২ হাজার কিলোমিটার (১ হাজার ২৪০ মাইল) দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ঘণ্টায় এই ক্ষেপণাস্ত্রের ছোটার গতি ৬ হাজার কিলোমিটার। তবে এই ক্ষেপণাস্ত্র কি রাশিয়ার অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র বা কামানের গোলার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক, যা ব্যাপক মৃত্যু এবং ধ্বংসের কারণ হতে পারে?

কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের পারমাণবিক নীতি বিশেষজ্ঞ জেমস অ্যাক্টন বলছেন, ‌‘আমি এই ক্ষেপণাস্ত্রকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছি না। আমি জানি না হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়া কতটা সুবিধা পাচ্ছে।’

গত বছরের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গর্ব করে বলেছিলেন, ‘রাশিয়া হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই অস্ত্র ট্র্যাক করা কঠিন, কারণ এটি মাঝ-পথেই দিক পরিবর্তন করতে পারে।’

রাশিয়া শনিবার রোমানিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউক্রেনের ডেলিয়াটিন গ্রামের ভূগর্ভস্থ একটি অস্ত্রাগারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর একটি ভিডিও টুইট করেছে।

জুরিখের সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের ডোমিনিকা কুনারতোভা বলেছেন, ‘‘এটি এক ধরনের প্রদর্শনীর লক্ষণ। এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হলেও এটিকে আমাদের ‘বিচ্ছিন্ন মুহূর্ত’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কারণ রাশিয়ার কাছে এই ক্ষেপণাস্ত্র খুব বেশি নেই।’’

এসএস/জেএস