রাশিয়ার মিগ-৩১কে যুদ্ধবিমানে বসানো হয়েছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কিনঝালI ছবি: রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী প্রথমবারের মতো ইউক্রেন যুদ্ধে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের একটি ভূগর্ভস্থ বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংসের দাবি করেছে মস্কো। শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই দাবি জানানোর পর প্রশ্ন উঠেছে, এই অস্ত্র আসলে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ কিংবা এটি আসলেই কোনো গেম চেঞ্জার কি না?

রাশিয়ার এই দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কিনঝাল বা ছুরির প্রথম ব্যবহার হবে। সম্ভবত মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে বাতাসের চেয়ে ১০ গুণ গতিসম্পন্ন এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কী?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিভিন্ন সময় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রে তার দেশের বিনিয়োগের কথা তুলে ধরেছেন; যা শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে।

পরিসংখ্যানও বেশ চমকপ্রদ, রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মতে— কিনঝাল ২ হাজার কিলোমিটার (১ হাজার ২৪০ মাইল) দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ঘণ্টায় এই ক্ষেপণাস্ত্রের ছোটার গতি ৬ হাজার কিলোমিটার। তবে এই ক্ষেপণাস্ত্র কি রাশিয়ার অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র বা কামানের গোলার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক, যা ব্যাপক মৃত্যু এবং ধ্বংসের কারণ হতে পারে?

কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের পারমাণবিক নীতি বিশেষজ্ঞ জেমস অ্যাক্টন বলছেন, ‌‘আমি এই ক্ষেপণাস্ত্রকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছি না। আমি জানি না হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়া কতটা সুবিধা পাচ্ছে।’

কিনঝাল ২ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে

গত বছরের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গর্ব করে বলেছিলেন, ‘রাশিয়া হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই অস্ত্র ট্র্যাক করা কঠিন, কারণ মাঝ-পথেই দিক পরিবর্তন করতে পারে।’

রাশিয়া রোমানিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউক্রেনের ডেলিয়াটিন গ্রামের ভূগর্ভস্থ একটি অস্ত্রাগারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর একটি ভিডিও টুইট করেছে।

জুরিখের সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের ডোমিনিকা কুনারতোভা বলেছেন, ‘‘এটি এক ধরনের প্রদর্শনীর লক্ষণ। এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হলেও এটিকে আমাদের ‘বিচ্ছিন্ন মুহূর্ত’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কারণ রাশিয়ার কাছে এই ক্ষেপণাস্ত্র খুব বেশি নেই।’’

গেম চেইঞ্জার?

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চার বছর আগে কিনঝালকে ‘অপরাজেয়’ অস্ত্রের একটি সিরিজ হিসেবে উন্মোচন করেছিলেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম এই অস্ত্র। রাশিয়ার অন্যান্য হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে আছে, জিরকন ও অ্যাভানগার্ড; এ দুই অস্ত্রও অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং পাল্লা অনেক বেশি।

প্রচলিত অস্ত্রের পাশাপাশি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে কিনঝাল। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান কালিনিনগ্রাদে পাঠিয়েছে। এর ফলে ইউরোপের অনেক রাজধানী রুশ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে চলে এসেছে।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কোথায় থেকে কোন এলাকায় নিক্ষেপ করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি রাশিয়া।

ডোমিনিকা কুনারতোভা বলেছেন, ‘এটি পশ্চিমের জন্য সতর্ক সংকেত। কারণ পশ্চিম এই ধরনের অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর সাহস দেখিয়েছে, যা নিয়ে পুতিন বিরক্ত। তবে এই অস্ত্র নিখুঁত কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। যে কারণে এটিকে গেম গেঞ্জার বলা যায় না।’

এদিকে, শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এক হাজার ৮০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

অ্যাক্টন বলেছেন, ‘এটি আশ্চর্যজনক সংখ্যা এবং রাশিয়ার যুদ্ধ-পূর্ব তালিকার খুব গুরুত্বপূর্ণ এক ভগ্নাংশ। যা রাশিয়ার বিমান হামলায় আনগাইডেড বোমার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। রাশিয়া হয়তো সঠিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব বোধ করছে।’

সূত্র: বিবিসি।

এসএস